রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে এসে শিক্ষার্থীদের তীব্র বিক্ষোভের মুখে পড়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, শিক্ষা উপদেষ্টা ড. সি আর আবরার এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

আজ মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে তিনটার দিকে তাঁরা কলেজ থেকে বের হওয়ার পর দিয়াবাড়ি মোড়ে শিক্ষার্থীরা তাঁদের বাধা দেন। উপদেষ্টাদের গাড়ি ঘুরিয়ে আবার কলেজ ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয় প্রশাসন।

এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় তাঁরা কলেজে পরিদর্শনে যান এবং সেখানে শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবির বিষয়ে আলোচনা করেন। কলেজের ৫ নম্বর ভবনের নিচতলায় কনফারেন্স কক্ষে উপদেষ্টারা পাঁচ থেকে সাতজন শিক্ষার্থী প্রতিনিধি ও কলেজের শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করেন।

বেলা পৌনে একটার দিকে আলোচনার পর কনফারেন্স কক্ষ থেকে বেরিয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন,

“শিক্ষার্থীদের দাবি অত্যন্ত যৌক্তিক। সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিটি দাবি পূরণের আশ্বাস দিচ্ছি। বিশ্বাস রাখুন, আমরা তা বাস্তবায়ন করব।”

তবে এ বক্তব্যেও শিক্ষার্থীরা সন্তুষ্ট হননি। তাঁরা উপদেষ্টাদের ঘিরে ধরেন এবং দেয়াল লিখন ও স্লোগানে তাঁদের পদত্যাগ দাবি করতে থাকেন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে উপদেষ্টারা আবার কলেজ ভবনের ভেতরে ফিরে যান। ক্যাম্পাসে তখন পুলিশের উপস্থিতি দেখা যায়।

দুপুরে দিয়াবাড়ি মোড় ও কলেজ চত্বরে কয়েক শত শিক্ষার্থী বিক্ষোভে অংশ নেন। তাঁরা শিক্ষা উপদেষ্টা এবং প্রেস সচিবের পদত্যাগের দাবিতে একযোগে স্লোগান দিতে থাকেন। একই সময় সচিবালয়ের সামনেও শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে।

শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবি:

১. নিহত ব্যক্তিদের পূর্ণাঙ্গ নাম-পরিচয় প্রকাশ
২. আহতদের নির্ভুল তালিকা প্রকাশ
৩. নিহত ও আহতদের পরিবারের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ
৪. পুরোনো ও ঝুঁকিপূর্ণ প্রশিক্ষণ বিমান বাতিল করে আধুনিক ও নিরাপদ বিমান চালু
৫. বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ পদ্ধতি ও অবকাঠামোর সংস্কার
৬. শিক্ষকদের গায়ে সেনাবাহিনীর সদস্যদের ‘হাত তোলার’ ঘটনার জন্য জনসমক্ষে নিঃশর্ত ক্ষমা

সরকারি প্রতিক্রিয়া:

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস উইং এক বিবৃতিতে জানিয়েছে,

“শিক্ষার্থীদের ছয়টি দাবির প্রতিটিই যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য।”

প্রেক্ষাপট:

গতকাল সোমবার দুপুরে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিধ্বস্ত হয়। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত এ ঘটনায় ৩১ জন নিহত এবং ১৬৫ জন আহত হয়েছেন।

ঘটনাটি ঘিরে রাজধানীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আতঙ্ক, ক্ষোভ ও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তা ও জবাবদিহিতার প্রশ্নে সরকারের নীতিগত ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে লাগাতার আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন।