রাজনৈতিক দল হিসেবে পুনরায় নিজেদের নিবন্ধন ও দলীয় প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লা’ ফিরে পেয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। আজ মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সচিবালয় থেকে এ–সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ২০১৮ সালের ৭ ডিসেম্বর জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে জারি করা পূর্বের প্রজ্ঞাপনটি বাতিল করে নতুন করে নিবন্ধন পুনর্বহাল করা হলো। এই সিদ্ধান্ত উচ্চ আদালতের রায়ের ভিত্তিতে গৃহীত হয়েছে।
এর আগে, গত ৪ জুন নির্বাচন কমিশনের বৈঠকে জামায়াতের নিবন্ধন ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ সেদিন সাংবাদিকদের জানান, “অতিসত্বর জামায়াত তাদের নিবন্ধন ফেরত পাবে, সেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, দলীয় প্রতীকের বিষয়টি দাপ্তরিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হবে। জামায়াত ইতিমধ্যে তাদের প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লা’ ফেরত চেয়ে আবেদন করেছে। কমিশন এ বিষয়ে আলোচনা করে ‘স্ট্যাটাসকো এনটে’ অবস্থান, অর্থাৎ ২০১৩ সালে দলের যে অবস্থা ছিল—তখন তাদের প্রতীকসহ নিবন্ধন ছিল—তা বিবেচনায় নিয়েছে। এছাড়াও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের সংশ্লিষ্ট ধারাগুলিও মূল্যায়ন করা হয়েছে।
২০০৮ সালের নভেম্বরে নির্বাচন কমিশন জামায়াতকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন দেয়। কিন্তু ২০০৯ সালে ২৫ জন নাগরিক রিট করে ওই নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করেন।
২০১৩ সালের ১ আগস্ট হাইকোর্ট জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে। এই রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াত আপিল ও লিভ টু আপিল করে। তবে আপিল বিভাগে শুনানি না হওয়ায় ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর তা খারিজ (ডিসমিসড ফর ডিফল্ট) হয়ে যায়।
পরে জামায়াত দেরির মার্জনা চেয়ে আবেদন করে এবং ২০২3 সালের ২২ অক্টোবর আপিল বিভাগ সেই আবেদন গ্রহণ করে আপিল ও লিভ টু আপিল পুনরুজ্জীবিত করে। শুনানির ধারাবাহিকতায় গত ১ জুন আপিল বিভাগ চূড়ান্ত রায় দেয়, যার পরিপ্রেক্ষিতেই জামায়াতে ইসলামী তাদের পুরোনো দলীয় মর্যাদা ও প্রতীক ফিরে পেয়েছে।
গত বছরের ১ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল। কিন্তু ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে সরকারের পতন ঘটে এবং ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। পরবর্তীতে আগের নিষেধাজ্ঞা বাতিল করা হয়।
এই সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটেছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর আবারও আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিতে ফিরছে জামায়াতে ইসলামী।