ইরানের অর্জন
১. আঞ্চলিক প্রতিরোধ শক্তির প্রমাণ
ইরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে সরাসরি ইসরায়েলের গভীরে আঘাত করেছে—এটা মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনীতিতে বিরাট বার্তা। ইরান দেখিয়েছে, কেবল তার প্রক্সি নয়, তার নিজস্ব সামরিক সক্ষমতাও ইসরায়েলের জন্য হুমকি।
২. রাজনৈতিক ঐক্য ও জনমত
যুদ্ধ ইরানি জনগণের মধ্যে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করেছে। এমনকি যারা সরকারবিরোধী ছিল, তারাও আক্রমণের মুখে ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের পাশে দাঁড়িয়েছে। এর মাধ্যমে সরকার তার অভ্যন্তরীণ ভিত্তি মজবুত করতে পেরেছে।
৩. যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ
কাতারে মার্কিন ঘাঁটিতে প্রতিশোধমূলক হামলা ইঙ্গিত দেয়—ইরান এখন আর শুধু কথা নয়, সরাসরি প্রতিক্রিয়া দেখাতে প্রস্তুত। এতে তেহরান তার আঞ্চলিক অবস্থান আরও সুদৃঢ় করে।
৪. পারমাণবিক কৌশলে নতুন উপলব্ধি
ইরান বুঝেছে, শুধু পারমাণবিক অবকাঠামো থাকলেই হবে না—তাকে সুরক্ষিত রাখার জন্য ‘বিশ্বাসযোগ্য প্রতিরোধক’ দরকার। ভবিষ্যতে এটি হয়তো কৌশলগত অস্পষ্টতা কিংবা ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা বাড়ানোর দিকে যাবে।
ইরানের ক্ষতি
১. পারমাণবিক অবকাঠামোর ধ্বংস
আরাক, নাতানজ, ফোরদো ও ইসফাহানের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এক দশকের প্রযুক্তি ও মানবসম্পদ ধ্বংস হয়েছে, যা সহজে পুনর্গঠনযোগ্য নয়।
২. বিজ্ঞানী ও সামরিক ক্যাডারের ক্ষতি
বেশ কয়েকজন অভিজ্ঞ পারমাণবিক বিজ্ঞানী ও উচ্চ পর্যায়ের সামরিক কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। এটি শুধু তাৎক্ষণিক ক্ষতি নয়—বরং ভবিষ্যতের কর্মক্ষমতা ও জ্ঞানভিত্তিকে দুর্বল করে।
৩. ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের ক্ষতি
ইসরায়েলি আক্রমণে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি ও স্টক ধ্বংস হয়েছে, যা প্রতিস্থাপন করতে সময় ও বিপুল অর্থ লাগবে।
৪. আন্তর্জাতিক উদ্বেগ ও নজরদারি বৃদ্ধি
যদিও ইরান দাবি করে যে তারা পারমাণবিক অস্ত্র বানাচ্ছে না, তবুও সাম্প্রতিক ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহলে তার ওপর সন্দেহ ও চাপ আরও বেড়েছে। বিশেষ করে IAEA ও পশ্চিমা দেশগুলো আরও কড়া নজর দিতে পারে।
ইরান হয়তো যুদ্ধে জিতেনি, তবে পরিস্থিতি সামলে নিয়ে শক্ত প্রতিপক্ষ হিসেবে নিজের অবস্থান তুলে ধরেছে। এটি তার ভবিষ্যৎ কূটনৈতিক আলোচনার টেবিলে অবস্থানকে প্রভাবিত করবে।
তবে পারমাণবিক কর্মসূচি ও সামরিক অবকাঠামোতে যে ক্ষতি হয়েছে, তা দ্রুত পূরণ না করলে দীর্ঘমেয়াদে ইরান দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। তাই সামনে তার মূল চ্যালেঞ্জ হবে—প্রতিরক্ষা জোরদার, আন্তর্জাতিক চাপ মোকাবিলা, এবং অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা ধরে রাখা।