‘প্লাস্টিক দূষণ আর নয়, বন্ধ করার এখনই সময়’—এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ও তরী বাংলাদেশ সরাইল শাখার আয়োজনে খোলা আকাশের নিচে পালিত হয়েছে বিশ্ব পরিবেশ দিবস।
দিবসটি পালন উপলক্ষে গতকাল বুধবার সকালে সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে আকাশী বিলের পাড়ে (পর্যটন এলাকা) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোশারফ হোসাইনের নেতৃত্বে তরীর অর্ধশতাধিক সদস্য ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করেন।
পরে সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে “তরী বাংলাদেশ” সরাইল শাখার আহ্বায়ক মোহাম্মদ মাহবুব খান-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পথসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন ইউএনও মো. মোশারফ হোসাইন। তরীর সদস্য সচিব মো. শাহগীর মৃধা-এর সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন—সরাইল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ও তরীর সদস্য মৃধা আহমাদুল কামাল, সরাইল সদর ইউপি চেয়ারম্যান মো. আব্দুল জব্বার, উত্তর কালিকচ্ছ মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক ও প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মো. আইয়ুব খান, সুকের পরিচালক মো. মুমিন হোসেন, তরীর সদস্য ও লেখক তালুকদার আবুল কাশেম, উদীচী সরাইল শাখার সভাপতি মো. মোজাম্মেল পাঠান, শিক্ষিকা ও সমাজকর্মী মোছা. নাজমা বেগম, তরীর সদস্য শেখ মো. কামরুজ্জামান সজল, মো. শাকিল আহমেদ ও মো. আমজাদ হোসেন প্রমুখ।
বক্তারা প্লাস্টিক দূষণ ও অপরিচ্ছন্নতার ক্ষতি এবং করণীয় দিকগুলো তুলে ধরেন-
বিশ্বব্যাপী নদীতে ফেলা প্লাস্টিক বর্জ্য একটি মহাবিপর্যয়ের রূপ নিয়েছে। বাংলাদেশের মতো নদীনির্ভর দেশে এটি আরও ভয়াবহ রূপ নেয়। এর ফলে:
জলজ প্রাণী মারা যাচ্ছে: নদীতে ফেলা প্লাস্টিক মাছ, কাঁকড়া, কচ্ছপসহ বিভিন্ন প্রাণী গিলে ফেলে বা এতে আটকে গিয়ে মারা যাচ্ছে।
মানুষের খাবারে প্লাস্টিক ঢুকছে: মাছের শরীরে থাকা মাইক্রোপ্লাস্টিক মানবদেহে প্রবেশ করে বিভিন্ন স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে—যেমন হরমোনজনিত সমস্যা, ক্যানসার, লিভার সমস্যা।
বন্যা ও জলাবদ্ধতা বাড়ছে: প্লাস্টিক জমে নদী ও খাল নালার পানি চলাচল বন্ধ করে দেয়, ফলে বৃষ্টি হলেই সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা।
জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে: নদী-ভিত্তিক বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে, কমে যাচ্ছে প্রাকৃতিক খাদ্যশৃঙ্খল।
পর্যটন ও জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত: নদীর পাশের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে পর্যটন খাতে প্রভাব ফেলছে। অনেক জেলে পরিবার মাছ কমে যাওয়ায় আয় হারাচ্ছে।
নদীর ধারে প্লাস্টিক ফেলার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে।
নদীর তীরে জনসচেতনতামূলক ব্যানার, লিফলেট, ক্যাম্পেইন চালাতে হবে।
প্রতিটি বাজার ও এলাকা থেকে প্লাস্টিক আলাদা করে রিসাইক্লিং নিশ্চিত করতে হবে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিবেশ শিক্ষা ও সচেতনতা কার্যক্রম জোরদার করতে হবে।
সবশেষে, সড়কের দুই পাশে অর্ধশতাধিক গাছের চারা রোপণ করেন তরীর সদস্যরা।