আয়াতুল্লাহ খামেনির এক সপ্তাহের অনুপস্থিতি গোটা দেশকে অস্থির করে তুলেছে। নেতৃত্ব শূন্যতার ইঙ্গিত কি দিচ্ছে নতুন সঙ্কটের আভাস?
তেহরান, ২৬ জুন:
যখন ইরান এবং ইসরায়েলের মধ্যে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ সামরিক সংঘাত চলছে, তখন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে জনসমক্ষে অনুপস্থিতি পুরো জাতিকে নাড়া দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে—খামেনি কোথায়?
৮৬ বছর বয়সী এই নেতা, যিনি দেশটির সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী, যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই নিখোঁজ। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন, সংবাদপত্র, এমনকি সরকারি বার্তাতেও নেই তার কোনো বক্তব্য, ছবি বা উপস্থিতি।
সরকারি সূত্র বলছে, খামেনি এখন গোপন বাঙ্কারে, পরিবারসহ লুকিয়ে আছেন। তাকে পাহারা দিচ্ছে বিপ্লবী গার্ডের অতি-গোপন ইউনিট ‘ভালি-ই আমর’। ইসরায়েলের সম্ভাব্য আক্রমণ এড়াতেই এই ব্যবস্থা—এমনটাই দাবি সংশ্লিষ্টদের।
১৩ জুন, ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি গোপন পারমাণবিক কেন্দ্রে যৌথভাবে বিমান হামলা চালায়। এতে নিহত হন বেশ কয়েকজন শীর্ষ সেনা ও বিজ্ঞানী। ইরানও পাল্টা জবাব দেয়—কাতারে অবস্থিত মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে ছোঁড়ে একযোগে ক্ষেপণাস্ত্র।
ইরান জানায়, এই হামলায় তাদের ৬২৭ জন নাগরিক নিহত এবং প্রায় ৫,০০০ জন আহত হয়েছেন। তবে গণমাধ্যমে কড়াকড়ির কারণে এ সংখ্যা নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
অন্যদিকে, ইসরায়েল নিশ্চিত করেছে—তাদের দেশে ২৮ জন মারা গেছেন।
খামেনির দীর্ঘ নীরবতা ও অনুপস্থিতির মধ্যেই একটি গোপন তথ্য ফাঁস হয়েছে—তিনি নিজেই যে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছিলেন ভবিষ্যৎ উত্তরসূরি নির্ধারণে, সেই কমিটি এখন দ্রুতগতিতে কাজ শুরু করেছে। বিষয়টি আরও জল্পনার জন্ম দিয়েছে—তবে কি খামেনি গুরুতর অসুস্থ, নাকি…
ইরানের রাস্তায় জনগণের মধ্যে উৎকণ্ঠা স্পষ্ট। রাজধানী তেহরানে সম্প্রতি এক বিরল দৃশ্য দেখা গেছে—নারীরা আমেরিকা ও ইসরায়েল বিরোধী মিছিলে খামেনির ছবি হাতে নিয়ে অংশ নিচ্ছেন।
দেশটির কিছু সংবাদমাধ্যম সাহস করে উদ্বেগ প্রকাশও শুরু করেছে। খানেমান পত্রিকার সম্পাদক মোহসেন খলিফেহ লেখেন, “আমরা যারা তাকে ভালোবাসি, তার অনুপস্থিতিতে খুবই চিন্তিত। যদি তিনি মারা যান, তবে তা হবে ইতিহাসের সবচেয়ে মহিমান্বিত জানাজা।”
এক রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের উপস্থাপক সরাসরি খামেনির অবস্থান জানতে চাইলে খামেনির দপ্তরের কর্মকর্তা মেহেদি ফাজায়েলি কৌশলে এড়িয়ে যান। বলেন, “সবাই প্রার্থনা করুন। যাদের দায়িত্ব, তারা কাজ করছেন।”
যুদ্ধের উত্তাপ যখন চূড়ায়, তখন ইরানের প্রধান নেতার ছায়াও না থাকা একটি গভীর সংকেত। নেতৃত্বে শূন্যতা তৈরি হলে এই উত্তেজনা শুধু ইরানের ভেতরেই নয়, গোটা মধ্যপ্রাচ্যেই অস্থিতিশীলতা বাড়াতে পারে।