বার্তালাইভ.কম | আন্তর্জাতিক ডেস্ক | ২৬ জুন ২০২৫
যুক্তরাষ্ট্রের বি-টু বোমারু বিমান যখন ইরানে হামলা চালাচ্ছিল, তখন পূর্ব এশিয়ার কূটনীতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা চিন্তা করছিলেন—এই বার্তা কী পৌঁছাল উত্তর কোরিয়ার কাছে?
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন হামলা উত্তর কোরিয়ার নেতৃত্বকে আরও দৃঢ় করে তুলবে যে পারমাণবিক অস্ত্রই একমাত্র গ্যারান্টি যেটা আমেরিকার ‘রেজিম চেঞ্জ’-এর পরিকল্পনা ঠেকাতে পারে।
দক্ষিণ কোরিয়ার কিয়ংনাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লিম ইউল-চুল বলেন, “ট্রাম্পের এই হামলা কিম জং উনের বহুদিনের বিশ্বাসকে আবারও সত্য বলে প্রমাণ করল—পারমাণবিক অস্ত্রই টিকে থাকার একমাত্র উপায়।”
তিনি আরও বলেন, “এই হামলা উত্তর কোরিয়ার কাছে একটি সতর্কবার্তা নয় বরং একটি প্রমাণ—যে, ‘যাদের পারমাণবিক অস্ত্র নেই, তারাই আক্রান্ত হয়।’”
বিশ্লেষকদের মতে, ইরান এখনো কার্যকর পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে পারেনি, বরং কূটনৈতিক সমাধানে বহু বছর ধরে চেষ্টা করে যাচ্ছে। অন্যদিকে উত্তর কোরিয়া ইতিমধ্যে ৪০–৫০টি পরমাণু ওয়ারহেড ধারণ করে এবং বহু দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মাটি পর্যন্ত আঘাত হানতে সক্ষম।
“ইরান এখনো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধিকরণে অস্ত্র তৈরির সীমা ছাড়ায়নি,” বলেন আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ লেইফ-এরিক ইজলি। “অন্যদিকে পিয়ংইয়ংয়ের অস্ত্র এখন লঞ্চের জন্য প্রস্তুত—ICBM-সহ।”
বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনার পর উত্তর কোরিয়া রাশিয়ার সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা আরও জোরালো করবে। ইতিমধ্যে তারা ১৪ হাজারের বেশি সেনা ও মিলিয়ন মিলিয়ন গোলাবারুদ ইউক্রেনে রাশিয়াকে দিয়েছে। এর বদলে রাশিয়া দিয়েছে আকাশ প্রতিরক্ষা, ইলেকট্রনিক যুদ্ধ ব্যবস্থা, ও পরিশোধিত তেল।
লিম বলেন, “রাশিয়ার সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি রয়েছে, যা যেকোনো হামলার ক্ষেত্রে রাশিয়াকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে হস্তক্ষেপের সুযোগ দেয়।”
সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের ভিক্টর চা বলেন, “এই হামলা কিম জং উনকে দেখিয়ে দিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের মতোভাবে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে হামলা চালাতে পারবে না।”
“এই ঘটনা প্রমাণ করে দেয়—কিমের দৃষ্টিতে পারমাণবিক অস্ত্র সমঝোতার কোনো বিষয় নয়, বরং অপরিহার্য সুরক্ষা।” — তিনি আরও যোগ করেন।
বিশ্লেষকদের মতে, ইরানে মার্কিন হামলা বিশ্বে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ চেষ্টাকে আরও দুর্বল করে দিয়েছে। উত্তর কোরিয়ার মতো দেশগুলোর জন্য এটি একটি স্পষ্ট বার্তা—পারমাণবিক অস্ত্র থাকলে আপনি নিরাপদ, না থাকলে আপনি ইরান, লিবিয়া বা ইরাক হতে পারেন।
অধ্যাপক লিম বলেন, “এই হামলা উত্তর কোরিয়ার বিদেশনীতি আরও রাশিয়ানঘেঁষা করবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি অবিশ্বাস আরও গভীর হবে।”
🔗 সূত্র: CNN, ২৫ জুন ২০২৫
✍️ প্রতিবেদক: মাইক ভ্যালেরিও, ব্র্যাড লেনডন, ইউঞ্জুং সিও ও গাওন বে