বার্তালাইভ.কম । অনুসন্ধানী ডেস্ক
সংক্ষেপে:
কুমিল্লার মুরাদনগরে এক নারী কর্তৃক দায়ের করা ধর্ষণ মামলার ঘটনায় নতুন মোড় দেখা দিয়েছে। মামলার বাদী নিজেই জানাচ্ছেন মামলা তুলে নেওয়ার কথা। তবে এই ঘটনার পেছনে স্থানীয় বাস্তবতা, সামাজিক উত্তেজনা ও কিছু অতি উৎসাহী যুবকের ভূমিকা ঘিরে নানা প্রশ্ন ও বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
মামলার শুরু এবং ভিডিও ছড়িয়ে পড়া
গত শুক্রবার রাতে মুরাদনগর থানায় দায়ের করা এক মামলায়, বাদী অভিযোগ করেন— ফজর আলী নামের এক ব্যক্তি তার ঘরের দরজা ভেঙে ঢুকে তাকে ধর্ষণ করেন।
পরদিন শনিবার একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়, যেখানে দেখা যায়—এক নারীকে ৮–১০ জন যুবক বিবস্ত্র করে মারধর করছেন, তিনি বারবার ছেড়ে দেওয়ার আকুতি জানাচ্ছেন।
ভিডিও প্রকাশের পর পুলিশের পক্ষ থেকে দ্রুত অভিযান চালিয়ে মূল অভিযুক্ত ফজর আলীসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
রোববার গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মামলার বাদী বলেন,
“আমি মামলা তুলে নেব। আমার স্বামী বলেছেন, যেন এসবে না যাই। পরিবারের কাউকে না জানিয়েই মামলা করেছিলাম। এখন সবাই চায়, আমি মামলা তুলে নিই।”
তিনি আরও জানান, তাকে কেউ চাপ দেয়নি বা টাকার প্রলোভন দেখায়নি।
ফজর আলীর বিষয়ে তিনি বলেন,
“তার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক ছিল না। তবে তার কাছ থেকে টাকা ধার নিয়েছিলাম। সেই টাকা নিয়ে আমাদের মাঝে কথাবার্তা হতো।”
স্থানীয়দের দাবি: ঘটনা যেভাবে প্রকাশ পেয়েছে, বাস্তবতা ভিন্ন
ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, ভুক্তভোগীর বাড়িতে শত শত মানুষ ভিড় করছে।
স্থানীয় অনেকেই বলছেন,
“মিডিয়ায় যেভাবে বলা হচ্ছে সেভাবে কোনো ঘটনা ঘটেনি। ফজর আলীর সঙ্গে ওই নারীর পূর্বপরিচয় ছিল, সে পরিচয়ে সেদিন ফজর আলী সে নারীর ঘরে যান। কিন্তু ৮–১০ জন যুবক অতিরিক্ত উৎসাহে ফজর আলীকে ওই নারীর ঘরে পেয়ে জোর করে ধরে মারধর করে, এবং ভিডিও করে তা ভাইরাল করে।”
এই অভিযোগে আলোচনায় আসা যুবকদের একজন—সুমন, স্থানীয় ছাত্রলীগের সভাপতি বলেও জানা গেছে।
পুলিশের অবস্থান: তদন্ত চলছে, নতুন মামলা প্রস্তুত
মুরাদনগর থানার ওসি জাহিদুর রহমান বলেন,
“এখন পর্যন্ত বাদী কোনো মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করেননি। তবে আমরা ঘটনাটি গভীরভাবে তদন্ত করছি।”
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খান জানিয়েছেন,
“গ্রেপ্তার পাঁচজনের মধ্যে চারজনের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন ও পর্নোগ্রাফি আইনে পৃথক মামলা করা হবে। এ ঘটনায় যারাই জড়িত, সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।”
ফজর আলীর বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। প্রতিবেশীরা জানান, ঘটনার পর থেকেই তার পরিবার পালিয়ে গেছে।
তবে ফজর আলীর বাবা বলেন,
“আমার ছেলে একসময় আওয়ামী লীগ করত। তাকে ফাঁসানো হয়েছে। পাওনা টাকা দেওয়ার কথা বলে ওই মহিলার ঘরে নিয়ে মারধর করা হয়েছে। শুনেছি, তার দুই পা পর্যন্ত ভেঙে দিয়েছে।”
অন্যদিকে,
কুমিল্লার মুরাদনগরের ঘটনায় ভুক্তভোগী নারীর নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে সব ধরনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অনলাইন থেকে ভুক্তভোগীর ভিডিও ও ছবি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সরাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
একটি রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি সৈয়দ জাহেদ মনসুরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ রোববার রুলসহ এ আদেশ দেন।