বার্তালাইভ.কম | স্বাস্থ্য ডেস্ক
গরমে হোক কিংবা ব্যায়াম বা কায়িক শ্রমের পর—ঠান্ডা পানি অনেকের কাছেই পরম শান্তির নাম। তবে অনেকেই মনে করেন, ঠান্ডা পানি পান শরীরের জন্য ক্ষতিকর, বিশেষ করে হজম বা শ্বাসপ্রশ্বাসের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। আবার অনেকেই এটিকে শরীর ঠান্ডা রাখার এবং ক্যালরি ঝরানোর কার্যকর উপায় হিসেবে দেখেন। তবে বাস্তব সত্যটা কী?
এই প্রতিবেদনে থাকছে ঠান্ডা পানি পান করার উপকারিতা, সম্ভাব্য ঝুঁকি ও বিশেষ স্বাস্থ্য পরামর্শ।
ঠান্ডা পানির উপকারিতা
১. ব্যায়ামের পর প্রশান্তিদায়ক:
ঠান্ডা পানি শরীরকে দ্রুত ঠান্ডা করে, বিশেষ করে ব্যায়াম বা কায়িক শ্রমের পর। এতে শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা কমে, হৃৎস্পন্দন স্বাভাবিক হয় এবং ক্লান্তি দ্রুত কেটে যায়।
২. শারীরিক কর্মক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক:
২০১২ সালের একটি গবেষণায় দেখা যায়, ঠান্ডা পানি শরীরকে অতিরিক্ত গরম হয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে এবং কোর টেম্পারেচার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে, যার ফলে পারফরম্যান্স উন্নত হয়।
৩. ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক:
ঠান্ডা পানি পান করলে শরীরকে তা কোর টেম্পারেচারে আনার জন্য অতিরিক্ত ক্যালরি খরচ করতে হয়। যদিও এটি খুবই সামান্য, তবে নিয়মিত পানি পান করলে চিনিযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলা যায়—যা ওজন কমাতে সাহায্য করে।
৪. হাইড্রেশন বজায় রাখে:
তাপমাত্রা যাই হোক না কেন, পর্যাপ্ত পানি পান শরীরের সকল অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কার্যকারিতা বজায় রাখে। ঠান্ডা পানি অনেকের জন্য বেশি উপভোগ্য হওয়ায় পান করার প্রবণতাও বাড়ে।
ঠান্ডা পানির ঝুঁকি ও সতর্কতা
১. হজমে সমস্যা:
কিছু মানুষ মনে করেন ঠান্ডা পানি পাকস্থলীতে গিয়ে হজমে বিঘ্ন ঘটায়, বিশেষ করে গরম খাবারের সঙ্গে পান করলে। যদিও এর পক্ষে শক্ত বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই, তবে যাদের হজম দুর্বল, তাদের ক্ষেত্রে এটি অস্বস্তি তৈরি করতে পারে।
২. শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা:
১৯৭৮ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ঠান্ডা পানি নাকের মিউকাস (শ্লেষ্মা) ঘন করে ফেলে, যা শ্বাস নেওয়াকে কঠিন করে তোলে। উল্টোভাবে গরম পানি বা স্যুপ শ্বাসপ্রশ্বাস সহজ করে দেয়।
৩. মাইগ্রেন ট্রিগার করতে পারে:
২০০১ সালের এক গবেষণায় প্রমাণ মেলে, ঠান্ডা পানি কিছু মানুষের ক্ষেত্রে মাইগ্রেনের ঘনঘটা বাড়িয়ে দিতে পারে।
৪. অ্যাকালেসিয়া রোগীদের জন্য ক্ষতিকর:
২০১২ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা অ্যাকালেসিয়া (esophagus-এ খাদ্য আটকে যাওয়ার সমস্যা) রোগে ভোগেন, তাদের জন্য ঠান্ডা পানি অসুবিধা তৈরি করতে পারে।
৫. দাঁতের সংবেদনশীলতা:
ঠান্ডা পানিতে অনেকের দাঁতে ব্যথা বা অস্বস্তি হয়, বিশেষ করে যারা ডেন্টাল হাইপোসেন্সিটিভিটির শিকার।
চীনা ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসা মতে, গরম খাবারের সঙ্গে ঠান্ডা পানি পান শরীরে ভারসাম্যহীনতা তৈরি করে। তাই সেখানে গরম পানি বা চা পরিবেশনের প্রচলন বেশি। একইরকম বিশ্বাস অনেক দক্ষিণ এশীয় সমাজেও দেখা যায়—বিশেষ করে প্রচণ্ড গরমে ঠান্ডা পানি না খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
যদিও কিছু ক্ষেত্রে ঠান্ডা পানির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে, তবে বেশিরভাগ মানুষের জন্য এটি নিরাপদ ও উপকারী। মূল বিষয় হলো—আপনার শরীরের চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত পানি পান করা, সেটা ঠান্ডা হোক বা রুম টেম্পারেচারের।
শরীরকে হাইড্রেটেড রাখা মানেই সুস্থ থাকা।
বিশেষ পরামর্শ:
যদি আপনার হজম বা মাথাব্যথার সমস্যা থাকে, ঠান্ডা পানির বদলে হালকা গরম পানি বেছে নিন। আর ব্যায়ামের পর ঠান্ডা পানি এক গ্লাস যথেষ্ট উপকারে আসতে পারে।