বাতালাইভ.কম ।। ব্যাংকক
ফাঁস হওয়া একটি কূটনৈতিক ফোনালাপের জেরে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পায়োংটার্ন সিনাওয়াত্রাকে বরখাস্ত করেছে দেশটির সাংবিধানিক আদালত। অভিযোগ উঠেছে, তিনি কম্বোডিয়ান নেতা হুন সেনের সঙ্গে ‘অসততা ও সংবিধান লঙ্ঘন’-মূলক কথোপকথন করেছেন, যেখানে তাঁকে ‘চাচা’ বলে সম্বোধন করতে এবং থাই সামরিক কমান্ডারদের সমালোচনা করতে শোনা যায়।
৩৬ জন সিনেটরের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত তাঁর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরুর সিদ্ধান্ত নেয় এবং তাৎক্ষণিক বরখাস্তের নির্দেশ দেয়। আদালত বলেছে, পায়োংটার্নের আচরণ নৈতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং তাঁর বক্তব্যে দেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয়েছে।
ফোনালাপ ও তার প্রভাব:
ফাঁস হওয়া রেকর্ডিংয়ে পায়োংটার্নকে হুন সেনকে ‘চাচা’ বলে সম্বোধন করতে এবং কম্বোডিয়ার প্রতি সুনজর দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতে শোনা যায়। এছাড়া, এক সিনিয়র থাই সামরিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও তিনি সমালোচনামূলক মন্তব্য করেন। এই রেকর্ডিং জনসাধারণের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করে, এবং তাঁর বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ ওঠে।
রাজনৈতিক চাপ ও জনরোষ:
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে পায়োংটার্ন ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক চাপে ছিলেন। তাঁর জোট সরকার থেকে একটি প্রধান দল সরে যাওয়ার পর থেকেই তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর আশঙ্কায় ছিলেন। এর মধ্যেই গত শনিবার ব্যাংককে প্রায় ১০ হাজার মানুষ তাঁর পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করে। এক জরিপে তাঁর জনপ্রিয়তা মাত্র ৯.২ শতাংশে নেমে এসেছে, যা মার্চ মাসে ছিল ৩০.৯ শতাংশ।
ক্ষমতা হস্তান্তর:
আশা করা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব এখন উপ-প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাই গ্রহণ করবেন। যদিও নতুন নেতৃত্ব নিয়ে জোট সরকার কতটা স্থিতিশীল থাকবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
শিনাওয়াত্রা পরিবার ও আইনি লড়াই:
পায়োংটার্ন থাইল্যান্ডের বিতর্কিত শিনাওয়াত্রা পরিবারের সদস্য। তাঁর বাবা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও ধনকুবের থাকসিন সিনাওয়াত্রাও বর্তমানে আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছেন। মঙ্গলবার তিনি আদালতে হাজির হন রাজপরিবার নিয়ে ২০১৫ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় দেওয়া এক সাক্ষাৎকারের জন্য। তাঁর বিরুদ্ধে লেস-ম্যাজেস্টে আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে, যার সর্বোচ্চ শাস্তি ১৫ বছর কারাদণ্ড।
শিনাওয়াত্রা পরিবারের বিরুদ্ধে এটাই প্রথম নয়। থাকসিন ২০০৬ সালে অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারান, তাঁর বোন ইংলাক ২০১৪ সালে একইভাবে অপসারিত হন। থাই রাজনীতিতে গত দুই দশক ধরেই সেনা-মুকুটধারীদের সঙ্গে এই পরিবারের দ্বন্দ্ব চলমান।
সাংবাদিকদের পায়োংটার্ন বলেন, “আমি এই রায় মেনে নিচ্ছি। দেশের জন্য সর্বোত্তম কিছু করাই সবসময় আমার উদ্দেশ্য ছিল। আমি জনগণের কাছে ক্ষমা চাই।” তিনি আরও জানান, ফোনালাপে তাঁর বক্তব্য ছিল কেবল ‘কূটনৈতিক কৌশল’।
মে মাসে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সীমান্তে গুলি বিনিময়ে এক কম্বোডিয়ান সৈন্য নিহত হন। এরপর থেকেই উভয় দেশের মধ্যে উত্তেজনা চরমে ওঠে এবং জাতীয়তাবাদী মনোভাব উস্কে উঠে। এই অবস্থায় হুন সেনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী পায়োংটার্নের ‘বন্ধুত্বপূর্ণ কথোপকথন’ অনেকের কাছে সন্দেহের উদ্রেক করেছে।