বার্তালাইভ.কম ।।আন্তর্জাতিক ডেস্ক
রাশিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, তারা তালেবান সরকারের পক্ষ থেকে নতুন রাষ্ট্রদূতের পরিচয়পত্র গ্রহণ করেছে। এই স্বীকৃতি একদিকে যেমন আঞ্চলিক সহযোগিতা ও সম্পর্ক জোরদারে রাশিয়ার আগ্রহের ইঙ্গিত, অন্যদিকে এটি পশ্চিমা বিশ্বের কড়া নজরদারির আওতায় এসেছে।
“আমরা বিশ্বাস করি, ইসলামিক আমিরাত আফগানিস্তানের সরকারের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দ্বিপাক্ষিক উৎপাদনশীল সহযোগিতাকে আরও বেগবান করবে,”
—রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি এক ভিডিও বার্তায় বলেন,
“এই সাহসী সিদ্ধান্ত অন্যদের জন্যও উদাহরণ হয়ে থাকবে। এখন যেহেতু স্বীকৃতি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, রাশিয়া সবার আগে এগিয়ে এসেছে।”
এই স্বীকৃতির ঘটনাটি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি স্পর্শকাতর মুহূর্ত। আফগান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিলিয়ন ডলার তহবিল এখনও মার্কিন হেফাজতে আটকে আছে, এবং তালেবানের একাধিক সিনিয়র নেতার উপর রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। তালেবান সরকারকে “আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত” করা থেকে বিরত রয়েছে জাতিসংঘসহ অন্যান্য বিশ্বশক্তিগুলো।
তালেবানের জন্ম ১৯৯৪ সালে, এবং ২০০৩ সালে রাশিয়া তালেবানকে “সন্ত্রাসী সংগঠন” ঘোষণা করেছিল। কিন্তু ২০২১ সালে তালেবানের ক্ষমতা দখলের পর থেকে রাশিয়ার দৃষ্টিভঙ্গি দ্রুত পাল্টেছে।
২০২৪ সালের এপ্রিলে রাশিয়ার সুপ্রিম কোর্ট তালেবানকে সন্ত্রাসী তালিকা থেকে বাদ দেয়। জুলাই মাসে প্রেসিডেন্ট পুতিন তালেবানকে “সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে মিত্র” হিসেবে আখ্যা দেন, বিশেষত ইসলামিক স্টেট খোরাসান প্রদেশ (ISKP)–এর বিরুদ্ধে, যারা আফগানিস্তান ও রাশিয়ায় একাধিক প্রাণঘাতী হামলা চালিয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, তালেবান শাসনের বাস্তবতা মেনে নিয়ে রাশিয়া এখন কৌশলগত ও অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যে তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক সুসংহত করতে চাইছে। তালেবান প্রতিনিধিরা ২০২২ ও ২০২৪ সালে সেন্ট পিটার্সবার্গ অর্থনৈতিক ফোরামে অংশ নেয়, আর রাশিয়া কাবুলে একটি বাণিজ্যিক কার্যালয় খোলে—যা ছিল প্রথম কোনো দেশের এমন পদক্ষেপ।
রাশিয়া আফগানিস্তানকে গ্যাস পরিবহনের ট্রানজিট হাব হিসেবে ব্যবহার করতে চায়, যার মাধ্যমে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় রপ্তানি বাড়ানো সম্ভব হবে।
এই স্বীকৃতির পর অন্যান্য আঞ্চলিক শক্তিগুলোর দৃষ্টিভঙ্গি বদলাবে কি না, সেটিই এখন দেখার বিষয়। তবে এটা স্পষ্ট, তালেবান সরকারকে ঘিরে আন্তর্জাতিক রাজনীতি এক নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করল।
উল্লেখযোগ্য
সূত্র: নিউজ এজেন্সিস