অভিনেতা থেকে রাজনীতিক হওয়া তামিল তারকা বিজয়, যিনি বর্তমানে তামিলাগা ভেট্রি কাজাগাম (TVK)-এর সভাপতি, শুক্রবার একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঘোষণায় জানিয়ে দিলেন—তার দল বিজেপি কিংবা ডিএমকে, কারো সঙ্গেই জোট করবে না। এর ফলে ২০২৬ সালের তামিলনাড়ু বিধানসভা নির্বাচনে এক নতুন ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস মিললো।
চেন্নাইয়ের উপকণ্ঠে পানাইউরে TVK-র প্রথম রাজ্য নির্বাহী সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিজয় নিজেকে দলের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, “TVK স্বার্থসিদ্ধির জন্য কোনও রাজনৈতিক জোটে যাবে না। বিজেপি বা ডিএমকে, কারোর সঙ্গেই নয়। যদি ভবিষ্যতে কোনও জোট হয়, তা হবে TVK নেতৃত্বাধীন এবং এই দুই পক্ষের বিরোধিতা করেই।”
তিনি স্পষ্ট করে জানান, এটি কোনও সাময়িক অবস্থান নয়। “এটা আমাদের চূড়ান্ত ও দৃঢ় সিদ্ধান্ত। এই বিষয়ে কোনও রকম আপস হবে না,” বলেন বিজয়।
বিজেপিকে “বিভাজনমূলক শক্তি” এবং “আদর্শগত বিরোধী” আখ্যা দিয়ে বিজয় বলেন, “সস্তা রাজনীতির স্বার্থে বিজেপি জনগণকে ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ করতে চায়। কিন্তু এই ষড়যন্ত্র তামিলনাড়ুতে চলবে না।” তিনি আরো বলেন, “TVK হলো না ডিএমকে, না এআইএডিএমকে—যারা রাজনৈতিক স্বার্থে বিজেপির সঙ্গে হাত মেলায়।”
বিজয় তার বক্তব্যে স্পষ্টভাবে দ্রাবিড় রাজনীতির প্রতি নিজের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন এবং বলেন, “তামিলনাড়ু এমন এক রাজ্য যেখানে সামাজিক ন্যায়, সম্প্রীতি এবং ভ্রাতৃত্ব গেঁথে আছে। পেরিয়ার, আন্না এবং অন্যান্য মহান নেতাদের অপমান করে বিজেপি এখানে কোনওদিনও সফল হতে পারবে না।”
ডিএমকে সরকারকেও একহাত নেন বিজয়। বিশেষ করে কাঞ্চিপুরম জেলার পারান্দুরে প্রস্তাবিত গ্রিনফিল্ড বিমানবন্দর প্রকল্প নিয়ে তিনি কড়া সমালোচনা করেন। TVK-এর সভায় কেন্দ্রের বিজেপি সরকার বিরোধী একাধিক প্রস্তাব পাস হয়, যার মধ্যে রয়েছে:
কচ্ছাতীভু দ্বীপ পুনরুদ্ধারের দাবি,
কীলাড়ি প্রত্নতাত্ত্বিক খননের “দমন” নীতির সমালোচনা,
দিল্লির সীমান্তে কৃষক আন্দোলনের সময় কৃষকদের প্রতি “অমানবিক আচরণ” এর বিরোধিতা।
TVK নির্বাহী কমিটি আরও সিদ্ধান্ত নেয় মেলমা SIPCOT শিল্প সম্প্রসারণ প্রকল্পের বিরোধিতা করবে এবং কৃষকদের বিশেষ করে কৃষ্ণগিরি, থেনি, থিরুভাল্লুর, সেলাম ও ডিন্ডিগুল জেলার আমচাষিদের দাবির পক্ষে আন্দোলন করবে। রাজ্য সরকারের কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠি পাঠানোর কৌশলকে কটাক্ষ করে বিজয় বলেন, “কেবল চিঠি দিয়ে কিছু হয় না, বাস্তব পদক্ষেপ দরকার।”
TVK আগামী জুলাই মাস জুড়ে রাজ্যব্যাপী বুথভিত্তিক সভা আয়োজনের মাধ্যমে দুই কোটির সদস্য সংগ্রহের উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছে। আগস্টে দ্বিতীয় রাজ্য সম্মেলনের পর সেপ্টেম্বরে বিজয় রাজ্যজুড়ে সফরে বের হবেন বলে দল জানায়।
TVK-এর সাধারণ সম্পাদক এন আনন্দ জানান, দলীয় জোট ও কৌশল সংক্রান্ত সকল সিদ্ধান্তে বিজয় সম্পূর্ণ স্বাধীন। ফেব্রুয়ারি ২০২৪-এ দল ঘোষণা করার সময় বিজয় বলেছিলেন, “আমাদের লক্ষ্য ২০২৬ সালের নির্বাচনে অংশ নেওয়া এবং মানুষের প্রয়োজনীয় মৌলিক রাজনৈতিক পরিবর্তন সাধন করা।”
এই বক্তব্য এবং প্রস্তাবগুলো তামিল রাজনীতিতে একটি শক্তিশালী তৃতীয় শক্তির সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলছে।
সূত্র: দ্যা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস