বার্তালাইভ.কম
বিশ্বের শীর্ষ ধনী ও প্রযুক্তি উদ্যোক্তা এলন মাস্ক শনিবার (৬ জুলাই) ঘোষণা দিয়েছেন যে তিনি একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার পর মাস্ক এই সিদ্ধান্ত নিলেন। ট্রাম্পের সমর্থিত একটি বিল আইন হিসেবে পাশ হওয়ার পর মাস্ক পূর্বঘোষিত হুমকি বাস্তবায়নে এগিয়ে গেলেন।
নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’-এ মাস্ক বলেন, “যখন অপচয় ও দুর্নীতির মাধ্যমে দেশকে দেউলিয়া করা হয়, তখন আমরা আসলে একদলীয় শাসনে বাস করি, গণতন্ত্রে নয়। আজ ‘আমেরিকা পার্টি’র জন্ম, আপনাদের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিতে।”
ট্রাম্পের ২০২৪ সালের নির্বাচনী প্রচারণায় সবচেয়ে বড় ব্যক্তিগত অনুদানদাতা ছিলেন মাস্ক এবং সম্প্রতি পর্যন্ত প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা হিসেবেও কাজ করেছেন। তিনি প্রশাসনের ব্যয় সঙ্কোচন কর্মসূচির নেতৃত্ব দেন। তবে ট্রাম্পের তথাকথিত “বিগ বিউটিফুল বিল” নিয়ে মাস্কের কড়া সমালোচনা—যেটি বিশ্লেষকদের মতে যুক্তরাষ্ট্রের বাজেটে ট্রিলিয়ন ডলারের ঘাটতি তৈরি করবে—এই দুই ব্যক্তির সম্পর্ক ছিন্ন করার প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
যদিও মাস্ক কিছু সময়ের জন্য ট্রাম্পের প্রতি আক্রমণাত্মক সামাজিক পোস্ট মুছে দিয়ে ও দুঃখ প্রকাশ করে দ্বন্দ্ব কিছুটা প্রশমিত করেছিলেন, তবে বিলটি আইন হিসেবে পাশের পথে এগোতেই ফের উত্তেজনা বেড়ে যায়। ট্রাম্প শুক্রবার সেই বিলটিতে স্বাক্ষর করেন।
এখনও নিশ্চিত নয়, মাস্ক আনুষ্ঠানিকভাবে ‘আমেরিকা পার্টি’ নামে দলটি নিবন্ধনের জন্য ফেডারেল নির্বাচন কমিশনে (FEC) কোনো পদক্ষেপ নিয়েছেন কি না। সর্বশেষ FEC নথিপত্রে এমন কোনো দল গঠনের প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
এ পর্যন্ত মাস্ক নতুন দলের আদর্শ নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি, তবে তিনি জানিয়েছেন যে এটি হবে ব্যয় সংযমী ও রাজস্ব খাতে রক্ষণশীল চিন্তাধারায় বিশ্বাসী। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ঋণনীতি এক ধরনের “ঋণ দাসত্ব”।
মজার বিষয়, সামাজিক ইস্যুতে ট্রাম্প ও মাস্কের দৃষ্টিভঙ্গি অনেকটা কাছাকাছি হলেও বাজেট ও রাজস্ব নিয়ে মাস্ক ট্রাম্পের রক্ষণশীল দলের সমালোচনা করেন।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রে দুইদলীয় ব্যবস্থার সমালোচনা বহুদিন ধরেই চলেছে, কিন্তু গত শতাব্দীতে গঠিত তৃতীয় কোনো দলই উল্লেখযোগ্য সফলতা পায়নি। উদাহরণ হিসেবে, ১৯৯২ সালে বিলিয়নিয়ার রস পেরো স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রায় ২০% ভোট পেলেও কোনো অঙ্গরাজ্যে জয় পাননি এবং বিল ক্লিনটনের কাছে পরাজিত হন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, নতুন রাজনৈতিক দল গঠন আইনগত ও আর্থিক দিক থেকে অত্যন্ত জটিল, এবং ভোটার ও প্রার্থীদের মধ্যে নতুন দলে যোগদানে অনীহা রয়েছে।
এলন মাস্ক জানিয়েছেন, তার দল ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে সক্রিয় ভূমিকা রাখবে এবং প্রাথমিকভাবে কিছু নির্দিষ্ট হাউস ও সিনেট আসনে প্রার্থীদের সমর্থন দেবে।
এদিকে, ট্রাম্পও মাস্ককে পাল্টা হুমকি দিয়েছেন। চলতি সপ্তাহে তিনি বলেন, সরকার মাস্কের কোম্পানিগুলোর সঙ্গে করা বিশাল চুক্তিগুলো পুনর্বিবেচনা করতে পারে। তিনি আরও বলেন, মাস্কের নেতৃত্বাধীন “ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি” এখন “একটি দানব” হয়ে গেছে, যা আবার ফিরে এসে মাস্ককেই গ্রাস করতে পারে।
সূত্র: সিএনএন