বিজ্ঞান ডেস্ক:
হরর সিনেমার গল্প মনে হতে পারে, কিন্তু বাস্তবতা আরও ভয়ংকর। তেলাপোকা এমন এক ধরনের জীব যা মাথা কেটে ফেলার পরও প্রায় এক সপ্তাহ বেঁচে থাকতে পারে। এই তথ্য শুধু বিস্ময়করই নয়, বরং আমাদের পরিচিত জীববিজ্ঞানের ধারণাকেও চ্যালেঞ্জ করে।
অন্য যেকোনো প্রাণীর মতো মানুষসহ বেশিরভাগ প্রাণী মাথা হারালে কয়েক মিনিটের মধ্যেই মারা যায়, কিন্তু তেলাপোকার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। এর পেছনে রয়েছে তাদের অস্বাভাবিক দেহতাত্ত্বিক গঠন।
তেলাপোকার রক্তচাপ খুবই কম, এবং এদের খোলা ধরনের সঞ্চালনব্যবস্থা (open circulatory system) আছে। ফলে মাথা কেটে ফেললেও রক্তপাত তীব্র হয় না, এবং ঘাড়ের ক্ষত নিজে থেকেই জমাট বেঁধে যায়।
তেলাপোকা শ্বাস নেয় স্পিরাকল নামে শরীরের পাশে থাকা ছোট ছিদ্র দিয়ে। তারা বাতাস টেনে নেয় ট্রাকিয়া (tracheae) নামক সরু নালীপথ দিয়ে, যেটা সরাসরি শরীরের কোষে অক্সিজেন সরবরাহ করে।
“তেলাপোকার মস্তিষ্ক তার শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ করে না এবং রক্তের মাধ্যমে শরীরে অক্সিজেন পরিবহন করা হয় না” — Discover Wildlife
তেলাপোকার আরও এক অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য হলো, মস্তিষ্ক ছাড়াও তার শরীর চলতে পারে। এদের শরীরে বিভিন্ন অংশে গ্যাংলিয়া নামে স্নায়ুকেন্দ্র থাকে, যা স্থানীয়ভাবে স্পর্শ, আলো বা অন্য উত্তেজনায় প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে। অর্থাৎ, মাথা না থাকলেও পোকা কিছুটা হাঁটতে বা নড়তে পারে।
তবে মস্তিষ্কের অনুপস্থিতিতে এই চলাফেরা হয় অকার্যকর ও এলোমেলো, এবং ধীরে ধীরে দুর্বল হতে থাকে।
যদিও তেলাপোকা মাথা ছাড়া বেঁচে থাকতে পারে, কিন্তু খাওয়ার জন্য মুখ দরকার। মুখ না থাকায় তারা খাওয়া-দাওয়া ও পানি পান করতে পারে না, ফলে একসময় অনাহার ও পানিশূন্যতায় মারা যায়।
ল্যাব পরীক্ষায় দেখা গেছে, ভালো স্বাস্থ্য ও পরিবেশ থাকলে কিছু তেলাপোকা কয়েক দিন থেকে শুরু করে ১-২ সপ্তাহ পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। তবে তাদের মৃত্যু সময় নির্ভর করে তাপমাত্রা ও পরিবেশের উপরও।
তেলাপোকা ঠাণ্ডা রক্তের প্রাণী, তাই তাপমাত্রা কম থাকলে তাদের মেটাবলিজম ধীর হয় এবং তারা দীর্ঘ সময় ধরে কম শক্তিতে বেঁচে থাকতে পারে। তবে এ অবস্থায় তাদের কার্যক্ষমতাও কমে যায়।
তেলাপোকা মাথা ছাড়া বেঁচে থাকতে পারে—এটি শুধু একটি কৌতূহল নয়, বরং জীববিজ্ঞানের বিস্ময়কর দৃষ্টান্ত।
তবে এটিই প্রমাণ করে, কেন তেলাপোকা পৃথিবীর সবচেয়ে সহনশীল ও অভিযোজনক্ষম প্রাণীগুলোর একটি।