বার্তালাইভ.কম ।।
আজ মোহাম্মদ আশরাফুলের জন্মদিন। বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসে এক নাম, যে নাম শুনলেই ভক্তদের হৃদয়ে মিশে যায় বিস্ময়, প্রত্যাশা, হতাশা আর ভালোবাসা। তিনি বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম সত্যিকারের সুপারস্টার, যিনি নিজের অভিষেকেই লিখে দিয়েছিলেন নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা।
২০০১ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিজের প্রথম টেস্টেই সেঞ্চুরি করে আশরাফুল হয়ে যান বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান। এত বড় রেকর্ড, এত কম বয়সে—বাংলাদেশবাসী স্বপ্ন দেখতে শুরু করে, হয়তো এটাই আমাদের শচীন টেন্ডুলকার!
তার প্রতিভা ছিল প্রশ্নাতীত। কিন্তু সাফল্যের সেই ধারাবাহিকতা ছিল না। খারাপ পারফরম্যান্সের কারণে দল থেকে বাদ পড়া, আবার ফিরেই দুর্দান্ত ইনিংস উপহার দেওয়া—এটাই যেন হয়ে দাঁড়িয়েছিল তার স্বভাব। ২০০৫ সালে ভারতের বিপক্ষে চট্টগ্রামে করা ১৫৮ রানের ইনিংস আজও কিংবদন্তি হয়ে আছে, যেটিকে সৌরভ গাঙ্গুলি বলেছেন “আমার দেখা সেরা ইনিংসগুলোর একটি”।
তারপরের বছরেই কার্ডিফে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বিখ্যাত জয়, যেখানে আশরাফুলের সেঞ্চুরি বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা মুহূর্ত হয়ে রয়ে গেছে।
২০০৭ সালে মাত্র ২২ বছর বয়সে বাংলাদেশের তিন ফরম্যাটের অধিনায়ক করা হয় আশরাফুলকে। এটি ছিল এক তরুণ কাঁধে বড় বোঝা চাপিয়ে দেওয়া। প্রথম ম্যাচেই সেঞ্চুরি করলেও, নেতৃত্ব তার ব্যাটিংকে গিলতে শুরু করে। ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স এবং দলের ফলাফল—দুটোই ভেঙে পড়ে। ২০০৯ সালে নেতৃত্ব হারানোর পরও ব্যাটিং গড় ছিল হতাশাজনক—টেস্টে ২২, ওয়ানডেতে ২৩।
২০১৩ সালে আসে সেই দুঃসংবাদ—স্পট ফিক্সিং কেলেঙ্কারিতে আশরাফুলের নাম। তিনি স্বীকার করেন যে বিপিএলে ম্যাচ ফিক্সিংয়ে জড়িত ছিলেন। এই স্বীকারোক্তি তার পুরো ক্যারিয়ারে কালো ছায়া ফেলেছিল। বিসিবি তাকে নিষিদ্ধ করে। একটি সম্ভাবনাময় ক্যারিয়ার থমকে যায় নৈতিকতার এক বিশাল ধাক্কায়।
তবুও, আশরাফুল থাকবেন ইতিহাসে। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম আন্তর্জাতিক তারকা, যার খেলা দেখতে মানুষ টেলিভিশনের সামনে অধীর হয়ে বসে থাকত। তিনি শিখিয়েছিলেন, বাংলাদেশও পারে।
২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তার ১৯০ রানের ইনিংসটি ছিল তখন পর্যন্ত একজন বাংলাদেশির সর্বোচ্চ টেস্ট ইনিংস। যদিও ঐ ম্যাচেই মুশফিকের দ্বিশতক সেটি ছাপিয়ে যায়, তবুও আশরাফুলের ইনিংস ছিল নিখুঁত শিল্পের মতো।
শুভ জন্মদিন, মোহাম্মদ আশরাফুল!
তোমার ক্যারিয়ার হয়তো প্রশ্নবিদ্ধ, তবে তুমি আমাদের স্বপ্ন দেখিয়েছিলে। প্রতিটি তরুণ ক্রিকেটার আজও তোমার সেই আগ্রাসী, আত্মবিশ্বাসী ব্যাটিং থেকে অনুপ্রেরণা খুঁজে পায়। জীবন যেমনই হোক, তুমি বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসে চিরকাল স্মরণীয় থাকবে।
উৎস: বিসিবি, আইসিসি রেকর্ড, সংবাদ আর্কাইভ