Top Header
Author BartaLive.com
তারিখ: ৮ জুলাই ২০২৫, ০২:০০ অপরাহ্ণ

গাজা খালি করার ছক: আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ

News Image

জেরুজালেম, ৮ জুলাই – ইসরায়েল গাজার শহর রাফাহ ধ্বংস করে সেখানে একটি তথাকথিত “মানবিক নগরী” গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছে, যেখানে ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক স্থানান্তর করা হবে। এই পরিকল্পনাকে মানবাধিকার আইনজীবী ও ইতিহাসবিদেরা ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রস্তুতি’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ হারেৎজ পত্রিকাকে জানিয়েছেন, রাফাহর ধ্বংসস্তূপের ওপর নির্মিতব্য এই ‘মানবিক নগরীতে’ ফিলিস্তিনিদের “নিরাপত্তা যাচাইয়ের” পর রাখা হবে এবং তারা এর বাইরে যেতে পারবে না।

কাটজ আরও বলেন, প্রথম ধাপে প্রায় ৬ লাখ মানুষকে, যাদের অনেকেই বর্তমানে আল-মাওয়াসিতে আশ্রয় নিয়েছেন, এই এলাকায় স্থানান্তর করা হবে। পরে পুরো গাজার জনগোষ্ঠীকেই সেখানে নিয়ে আসার পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “আমরা বাস্তবায়ন করব সেই ‘অবস্থানান্তর পরিকল্পনা’ যা হবেই।”

মানবাধিকার আইনজীবী মাইকেল সাফার্ড এই পরিকল্পনাকে আন্তর্জাতিক আইনের সরাসরি লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছেন। তার ভাষায়, “এটি একটি সুসংগঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধের পরিকল্পনা। এটি মূলত একটি জাতিগত স্থানান্তরের রূপরেখা।”

তিনি বলেন, “গাজার মানুষ এখন এমন দমনমূলক পরিস্থিতিতে রয়েছে, যেখানে কোনো স্থানত্যাগ ‘স্বেচ্ছায়’ হওয়া সম্ভব নয়। এটিকে ঐচ্ছিক বলা ভুল। যদি কাউকে তার জন্মভূমি থেকে জোর করে তাড়ানো হয়, তা যুদ্ধাপরাধ। আর যদি ব্যাপক পরিসরে হয়, তবে তা মানবতাবিরোধী অপরাধ।”

ইতোমধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প বছরের শুরুতে গাজার মানুষদের “পরিষ্কার করে” অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার কথা বলার পর থেকে, ইসরায়েলি রাজনীতিকদের অনেকেই এই ‘বাস্তুচ্যুতি’ পরিকল্পনার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।

হিব্রু ইউনিভার্সিটির হলোকাস্ট ইতিহাসবিদ অধ্যাপক অ্যামোস গোল্ডবার্গ বলেন, “এটি কোনো মানবিক নগরী নয়, এটি একটি বন্দিশিবির বা স্থানান্তর শিবির। একটি শহরে কর্মসংস্থান, শিক্ষা, চলাচলের স্বাধীনতা থাকে—এখানে কিছুই থাকবে না। এটি বাসযোগ্য হবে না, যেমন এখনকার তথাকথিত ‘নিরাপদ অঞ্চলগুলো’ বাসযোগ্য নয়।”

গোল্ডবার্গ বলেন, “যদি ফিলিস্তিনিরা এই পরিকল্পনা মানতে অস্বীকৃতি জানায়, তখন তাদের সঙ্গে কী করা হবে? তারা কি পুরোপুরি নিরস্ত্র, না তারা বিদ্রোহ করতে পারে?”

এদিকে কাটজের পরিকল্পনার সময়কাল নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, কারণ নেটানিয়াহু বর্তমানে ওয়াশিংটনে অবস্থান করছেন এবং ট্রাম্পের সঙ্গে তার বৈঠক হতে যাচ্ছে। এই সময়ই “মানবিক নগরী” নির্মাণ শুরু হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তবে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর প্রধানের দপ্তর আগেই জানিয়ে দিয়েছিল যে গাজার জনগণকে স্থানান্তর করা অভিযানের উদ্দেশ্য নয়। এই বিবৃতি সরাসরি কাটজের বক্তব্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোত্রিচ সহ আরও অনেক ইসরায়েলি নেতা গাজায় নতুন বসতি স্থাপনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।

রয়টার্স জানিয়েছে, গাজা এবং বাইরের অঞ্চলে ফিলিস্তিনিদের জন্য “মানবিক ট্রানজিট এলাকা” নামক ক্যাম্প নির্মাণের একটি ২ বিলিয়ন ডলারের পরিকল্পনা আগে ট্রাম্প প্রশাসনের সাথেও আলোচনা হয়েছিল।

সূত্র: দ্যা গার্ডিয়ান

Watermark