কেন্দ্র সরকারের শ্রমিক ও কৃষকবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে আজ মঙ্গলবার দেশজুড়ে এক বিশাল ধর্মঘট ও ভারত বন্ধ পালিত হচ্ছে। ১০টি কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নের যৌথ মঞ্চ, কৃষক সংগঠন ও গ্রামীণ শ্রমিকদের সমর্থনে আয়োজিত এই বন্ধে অংশ নিচ্ছেন প্রায় ২৫ কোটিরও বেশি শ্রমিক।
বার্তালাইভ.কম ।। নয়াদিল্লি
এই বন্ধের কারণে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ব্যাংকিং, ডাকঘর, কয়লা খনি, সরকারি পরিবহণ, বিদ্যুৎ সরবরাহসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ধর্মঘটে ব্যাংক ও বিমা খাতের কর্মীরা অংশ নিচ্ছেন, যার ফলে ব্যাঙ্কিং পরিষেবা ও এটিএম কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে। যদিও আজ কোনও সরকারি ব্যাংক ছুটি নয়, তবুও বেশিরভাগ শাখায় কাজকর্ম বন্ধ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিদ্যুৎ খাতেও বড় প্রভাব পড়তে পারে। প্রায় ২৭ লক্ষ বিদ্যুৎকর্মী এই ধর্মঘটে অংশ নিচ্ছেন বলে পিটিআই সূত্রে জানা গেছে। যদিও ভারতীয় রেলের পক্ষ থেকে কোনও ধর্মঘট ঘোষণা করা হয়নি, তবে ট্রেন চলাচলে বিঘ্ন বা দেরির আশঙ্কা রয়েছে।
এই ধর্মঘটের অন্যতম প্রধান ইস্যু হল সম্প্রতি সংসদে পাস হওয়া চারটি নতুন শ্রম কোড। ট্রেড ইউনিয়নগুলোর অভিযোগ, এই কোডগুলো শ্রমিকদের অধিকার খর্ব করে, ধর্মঘট ডাকা কঠিন করে এবং মালিকদের দায়মুক্তি দেয়। পাশাপাশি, সরকারি ক্ষেত্রের বেসরকারিকরণ, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বৃদ্ধি, চাকরির অনিশ্চয়তা ও কম মজুরির মতো বিষয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আন্দোলনকারীরা।
ধর্মঘটে সমর্থন জানিয়েছে কৃষক সংগঠনগুলিও। বিশেষ করে ‘সয়ুক্ত কিসান মোর্চা’, যারা এর আগে বিতর্কিত কৃষি আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিল, তারাও এবার শ্রমিকদের পাশে দাঁড়িয়েছে। শুধু সংগঠিত খাত নয়, অসংগঠিত খাতের বহু কর্মী ও স্বনিয়োজিত মহিলাদের সংগঠন ‘সেভা’-ও ধর্মঘটে অংশ নিচ্ছে।
ধর্মঘটে অংশ নিচ্ছে অল ইন্ডিয়া ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস (AITUC), ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস (INTUC), সেন্টার অফ ইন্ডিয়ান ট্রেড ইউনিয়নস (CITU), হিন্দ মজদুর সভা (HMS), লেবার প্রগ্রেসিভ ফেডারেশন (LPF), ইউনাইটেড ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস (UTUC) এবং সেভা (SEWA)-র মতো গুরুত্বপূর্ণ সংগঠনগুলো।
AITUC নেত্রী অমরজিৎ কউর বলেন, “সরকার আমাদের ১৭ দফা দাবিপত্রের কোনও সদুত্তর দেয়নি। গত ১০ বছরে একবারও বার্ষিক শ্রম সম্মেলন ডাকা হয়নি।” হিন্দ মজদুর সভার হরভজন সিং সিধুও বলেন, “এই বন্ধে দেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোর পরিষেবা থমকে যাবে।”
ফলে সাধারণ মানুষকে আজ দিনের শুরু থেকেই কিছুটা অসুবিধার মুখে পড়তে হতে পারে। তবে স্কুল, কলেজ ও বেসরকারি অফিস খোলা রয়েছে। ধর্মঘটকারীরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দাবি আদায়ের পথে এগোচ্ছেন।