২০২৫ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে গতকাল বৃহস্পতিবার। শিক্ষার্থীদের জন্য এটি যেমন উত্তেজনার দিন ছিল, অভিভাবক ও শিক্ষানীতিনির্ধারকদের জন্য তা ছিল বড় এক চিন্তার কারণ।
এই বছর এসএসসি পরীক্ষায় পাসের হার হয়েছে মাত্র ৬৮.৪৫ শতাংশ, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১৫ শতাংশ কম। গত বছর এই হার ছিল ৮৩.০৩ শতাংশ। একইসঙ্গে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৮২,১২৯ থেকে নেমে এসেছে মাত্র ১৩৯,০৩২-এ।
কেন এই পতন?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবারের ফলাফল শিক্ষা ব্যবস্থার একটি বাস্তবচিত্র তুলে ধরেছে। বিগত কয়েক বছর ধরে চলা একাধিক সংকট এবং মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার পরিবর্তন এর মূল কারণ।
১. খাতা মূল্যায়নে কঠোরতা
একজন বোর্ড পরীক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “এবার আগের মত পাশের হার বাড়ানোর চাপে ছিল না। আগের সরকার যেভাবে পাশ করিয়ে দিত, সেটা হয়নি। খাতা যথাযথভাবে দেখা হয়েছে।”
শিক্ষা বোর্ড সূত্রেও নিশ্চিত হওয়া গেছে, এবারে মার্কিং স্কিম ও স্ট্যান্ডার্ডাইজড গ্রেডিং কঠোরভাবে মানা হয়েছে, যাতে ফলাফল বাস্তব প্রতিফলন করে।
২. করোনার দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব
বিশেষজ্ঞ ও শিক্ষকরা মনে করছেন, করোনাভাইরাস মহামারী পরবর্তী সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পরেও শিক্ষার্থীরা মানসিক ও একাডেমিকভাবে পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি।
“এই ব্যাচটি করোনার সময় ৭ম-৮ম শ্রেণিতে ছিল। অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করেছে সীমিতভাবে, কোনো ধারাবাহিকতা ছিল না,” বললেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মেহরাব হোসেন।
৩. জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও রাজনৈতিক অস্থিরতা
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সারাদেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া গণআন্দোলন এবং তার ধারাবাহিক রাজনৈতিক অস্থিরতাও এসএসসি পরীক্ষার্থীদের পড়াশোনায় বড় ধাক্কা দিয়েছে। একাধিক জেলায় স্কুল কয়েক সপ্তাহ বন্ধ ছিল, যা প্রস্তুতিতে ব্যাঘাত ঘটিয়েছে।
৪. মোবাইল আসক্তি ও মনোযোগের অভাব
শিক্ষকরা বলছেন, এখনকার শিক্ষার্থীদের মধ্যে মোবাইল ফোন, সোশ্যাল মিডিয়া ও গেমিং-এর প্রতি আসক্তি মারাত্মকভাবে বেড়েছে। এতে মনোযোগ কমছে, পড়াশোনায় আগ্রহ কমছে।
“রাতে টিকটক, দিনে ক্লাস – এভাবে তো কিছু হয় না,” মন্তব্য করলেন এক জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা।
পরবর্তী করণীয় কী?
শিক্ষাবিদরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের ফলাফল খারাপ হওয়ায় কেবল তাদের দায়ী করলেই হবে না। বরং প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ।
ফলাফল নিয়ে অভিভাবকদের প্রতিক্রিয়া
ঢাকার এক অভিভাবক বললেন,
“ছেলে ফেইল করেছে, আমি চাই না সরকার শুধু পাশ করিয়ে দিক। আমি চাই ও শেখার সুযোগ পাক, প্রকৃত শিক্ষা পাক।”
২০২৫ সালের এসএসসি ফলাফল আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে— শিক্ষার নামে পাশ করানো নয়, প্রকৃত শিক্ষা নিশ্চিত করা দরকার। সময় এসেছে ‘গ্রেড’ নয়, ‘গুণগত মান’-এর দিকে মনোযোগ দেওয়ার।