Top Header
Author BartaLive.com
তারিখ: ১২ জুলাই ২০২৫, ১০:৩৬ পূর্বাহ্ণ

কুমিল্লা বোর্ডে এসএসসির ফলাফলে বিপর্যয়: মানবিক বিভাগের দুরাবস্থা

News Image

বার্তালাইভ.কম ।।

এক বছরের ব্যবধানে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে এসএসসির ফলাফলে নেমেছে মারাত্মক ধস। ২০২৪ সালে যেখানে পাসের হার ছিল প্রায় ৮০ শতাংশের কাছাকাছি, সেখানে ২০২৫ সালে তা নেমে এসেছে মাত্র ৬৩ দশমিক ৬০ শতাংশে। শুধু পাশের হার নয়, কমেছে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও, পাশাপাশি শতভাগ পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও অনেক কমে গেছে।

এই বোর্ডে সর্বশেষ এমন ভাঙনের চিত্র দেখা গিয়েছিল ২০১৭ সালে, যখন পাশের হার ছিল মাত্র ৫৯.০৩ শতাংশ। তবে এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে কুমিল্লা বোর্ডে ফলাফল উন্নতির দিকে ছিল। ২০২১ সালে যেখানে পাসের হার পৌঁছেছিল ৯৬ শতাংশের ওপরে, সেখানে চলতি বছরের এমন ফলাফল শিক্ষা অঙ্গনে বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে।

মানবিক বিভাগের দুরাবস্থা

ফল বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, সবচেয়ে বাজে পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে মানবিক বিভাগ। এ বছর মানবিক শাখায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের অর্ধেকেরও কম পাস করেছে—মাত্র ৪৬ দশমিক ৭৭ শতাংশ। গোটা বোর্ডে ৯ হাজার ৯০২ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে, যার মধ্যে মাত্র ১৪৩ জন মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী। এর মধ্যে মাত্র ৫ জন ছেলে, বাকি ১৩৮ জন মেয়ে।

গণিত ও ইংরেজিতে ব্যর্থতা

গণিত ও ইংরেজি—এই দুই আবশ্যিক বিষয়ে ফলাফল সবচেয়ে হতাশাজনক। গণিতে ফেল করেছে প্রায় ২৮ শতাংশ শিক্ষার্থী, ইংরেজিতে ১১ শতাংশেরও বেশি। অনেক শিক্ষার্থীরই প্রস্তুতি ছিল না এমন ধরনের প্রশ্নের জন্য, যেখানে পাঠ্যবইয়ের সীমার ভেতর থেকেই প্রশ্ন করা হলেও তা ছিল জটিলভাবে উপস্থাপিত।

শহর বনাম গ্রাম: বৈষম্যের চিত্র

একটি বড় পার্থক্য চোখে পড়েছে শহর ও গ্রামের স্কুলগুলোর মধ্যে। শহরের বিদ্যালয়গুলোতে তুলনামূলক ভালো ফলাফল এলেও, গ্রামের বহু বিদ্যালয়ে বিপর্যয়ের চিত্র দেখা গেছে। একটি স্কুল থেকে একজনও পাশ করেনি, এমন নজির এবারও আছে—নাঙ্গলকোট উপজেলার ইসলামপুর উচ্চবিদ্যালয়ের ২৩ জন শিক্ষার্থীর সবাই ফেল করেছে। একই উপজেলার আরও একটি স্কুলে ১৪ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করেছে মাত্র একজন।

মার্কিংয়ে ‘সততা’ ও রাজনৈতিক প্রভাবের অনুপস্থিতি

বোর্ডের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তারা বলছেন, এবার পরীক্ষায় অনিয়ম বা রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ একেবারেই ছিল না। আগের মতো ‘ওভার মার্কিং’ বা নম্বর বাড়িয়ে দেওয়ার প্রবণতা দেখা যায়নি। নির্দেশনা ছিল—ফলাফলে যেন বাস্তব চিত্র প্রতিফলিত হয়। সেই কারণে নম্বর প্রদানে ছিল সততা, যা ফলাফলের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলেছে।

শিক্ষার্থীদের আত্মহনন: একটি সামাজিক সংকেত

ফলাফলের হতাশাজনক প্রভাব শুধু পরিসংখ্যানেই নয়, তা ছুঁয়ে গেছে ব্যক্তিজীবনের নির্মম বাস্তবতাও। কুমিল্লার বুড়িচং ও দাউদকান্দিতে অকৃতকার্য হয়ে দুই শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে, যা গোটা সমাজের জন্য গভীর দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বোর্ডের অবস্থান ও ভবিষ্যৎ করণীয়

কুমিল্লা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর শামছুল ইসলাম জানিয়েছেন, ফলাফল বিশ্লেষণ করে বোঝা গেছে—গণিত ও ইংরেজিতে শিক্ষকদের দক্ষতা বাড়ানো জরুরি। সেই লক্ষ্যে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি যেসব স্কুলে শিক্ষার্থীরা ব্যাপকভাবে ফেল করেছে, সেসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম খতিয়ে দেখা হবে।

বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর রুনা নাছরিন অবশ্য বলেছেন, ফলাফলে যেটা ঘটেছে, তা অস্বাভাবিক নয়। বরং বছরের পর বছর ধরে পরীক্ষায় যে ধরনের পরিবেশ ছিল, এবার তা অনেক বেশি নিয়ন্ত্রিত, নিয়মতান্ত্রিক ও স্বচ্ছ হয়েছে। সে কারণেই প্রকৃত মানচিত্র উঠে এসেছে বলে তিনি মনে করেন।

Watermark