দিনাজপুর-৪ আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর দলীয় মনোনয়নকে ঘিরে অভ্যন্তরীণ বিরোধ চরমে পৌঁছেছে। এই বিরোধের জেরে শুক্রবার (১১ জুলাই) রাতে খানসামা উপজেলার ভাবকী ইউনিয়নের কাচিনীয়া বাজার এলাকায় দলটির দুটি পক্ষের মধ্যে সহিংস সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে অন্তত ২৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন এবং ভাঙচুর করা হয়েছে অর্ধ-শতাধিক মোটরসাইকেল।
প্রত্যক্ষদর্শী ও দলীয় সূত্র জানায়, বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী কর্নেল (অব.) মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ নেতাকর্মীরা ভাবকী ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফা প্রচারের উদ্যোগ নেন। ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হিসেবে আব্দুল জলিল শাহের নামে প্রচার কার্যক্রমের ঘোষণা থাকলেও তা নিয়ে আপত্তি তোলে কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য আখতারুজ্জামান মিয়ার অনুসারী গ্রুপ।
মিয়া গ্রুপের দাবি—আব্দুল জলিল শাহ বর্তমানে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নন, বরং উপজেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। ইউনিয়ন পর্যায়ে এখন নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের ঘনিষ্ঠ নাসির উদ্দিন, সেলিম শাহ, তহিদুল ইসলাম তহি ও জাকারিয়া ইসলাম। এই নেতৃত্বগত বিরোধের জেরে সকালেই জলিল শাহ ও ওয়ার্ড নেতা আশরাফ আলী হামলার শিকার হন এবং আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হন।
এ ঘটনার প্রতিবাদে সন্ধ্যায় কাচিনীয়া বাজারে একটি প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে কর্নেল মোস্তাফিজুর রহমানের অনুসারীরা। সভায় উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি মিজানুর রহমান চৌধুরী, ইউপি চেয়ারম্যান আবু বকর সিদ্দিক চৌধুরী, জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য শাহরিয়ার জামান শাহ নিপুণসহ বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
সভা শেষে মিয়া গ্রুপের অনুসারীরা কর্নেল গ্রুপের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় বলে অভিযোগ। সংঘর্ষে গুরুতর আহত হন উপজেলা বিএনপির সদস্য মহসিন আলী শাহ, ছাত্রদল নেতা মেহেদী হাসান মানিকসহ প্রায় ২৫ জন নেতাকর্মী। হামলাকারীরা দফায় দফায় হামলা চালিয়ে প্রায় ৫০টিরও বেশি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। সংঘর্ষের সময় কর্নেল মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী ও মিজানুর রহমান চৌধুরী দীর্ঘ প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে অবরুদ্ধ অবস্থায় ছিলেন।
পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং অবরুদ্ধদের উদ্ধার করে। বর্তমানে এলাকায় উত্তেজনা থাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
ঘটনার পর প্রতিক্রিয়ায় কর্নেল (অব.) মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, “তারেক রহমানের ঘোষিত ৩১ দফা প্রচার এবং তৃণমূলে দলকে সংগঠিত করার প্রয়াসেই আমাদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। এটি একটি গণতান্ত্রিক কর্মসূচির ওপর সরাসরি হামলা। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ও আইনগত ব্যবস্থা দাবি করছি।”
অন্যদিকে, মিয়া গ্রুপের অনুসারী এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রবিউল আলম তুহিনের কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এ বিষয়ে খানসামা থানার ওসি নজমুল হক জানান, “ঘটনার সময় সেনাবাহিনী ও পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে এলাকার পরিবেশ শান্ত রয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল এক সময় প্রকাশ্য রাজনৈতিক সহিংসতায় রূপ নিতে পারে—এমন আশঙ্কার বাস্তব প্রতিফলন দেখা গেছে খানসামার রাস্তায়। দলের মধ্যে বিদ্যমান দ্বন্দ্ব নিরসনে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কী পদক্ষেপ নেয়, এখন সেটাই দেখার বিষয়।