‘বেবিডল আর্চি’ নামে পরিচিত আসামের তরুণী আর্চিতা ফুকন হঠাৎ করেই ভারতের সোশ্যাল মিডিয়ায় এক আলোড়ন তুলেছেন। ২০২৩ সালে করা একটি ইনস্টাগ্রাম পোস্ট নতুন করে ভাইরাল হয়ে যাওয়ার পর থেকে শুরু হয় বিতর্ক, সহানুভূতি, কৌতূহল এবং একধরনের সাংস্কৃতিক ধাক্কা। সেই পোস্টে তিনি লিখেছিলেন, কীভাবে তিনি ছয় বছর ধরে যৌনপেশায় বাধ্য হয়ে কাটিয়েছেন, কীভাবে ২৫ লাখ টাকা দিয়ে তিনি নিজেকে মুক্ত করেছেন, আর আজ কীভাবে তিনি নিজের জীবনটাকে আবার নতুন করে গড়তে চান—এবার পর্ন ইন্ডাস্ট্রিতে।
এই পোস্ট ভাইরাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ভারতের টুইটার, ইনস্টাগ্রাম ও ইউটিউবভিত্তিক কমিউনিটিগুলোতে শুরু হয় নানা প্রতিক্রিয়া। কেউ কেউ তাঁকে সাহসী নারী বলে আখ্যা দিচ্ছেন, আবার অনেকে কটাক্ষ করছেন তাঁর পেশাগত পছন্দ নিয়ে। কেউ বলছেন, একজন নারী নিজের শরীর ও জীবন নিয়ে কী করবেন, তা একান্তই তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়। আবার কেউ বলছেন, এমন খোলামেলা ও আলোচিত পোস্ট সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয়ের ইঙ্গিত।
২০২৫ সালে আর্চিতা ফুকনের ক্যারিয়ারের একটি নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে, যখন তিনি মার্কিন প্রাপ্তবয়স্ক চলচ্চিত্র তারকা কেন্দ্রা লাস্টের সঙ্গে কাজ শুরু করেন। অনলাইন বিভিন্ন ভিডিওতে একসঙ্গে তাঁদের দেখা গেছে। যদিও ঠিক কোন প্রজেক্টে তাঁরা কাজ করছেন, সে বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায়নি, তবে ঘনিষ্ঠ সূত্রের বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, এটি হতে যাচ্ছে একাধিক কোটি টাকার প্রযোজনা যা আন্তর্জাতিক পর্ন প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পাবে।
এদিকে, তাঁর ২০২৩ সালের ইনস্টাগ্রাম পোস্টে তিনি যেভাবে দিল্লির জিবি রোডের মতো বিখ্যাত রেড-লাইট এলাকার অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করেছেন, তাতে স্পষ্ট হয়, এ কোনো রঙিন গল্প নয়, বরং এক নারীর দীর্ঘ শোষণ, ভয়, অপমান আর বেঁচে থাকার লড়াইয়ের বিবরণ। তাঁর ভাষায়, “ছয় বছর ধরে আমি ছিলাম অন্ধকার এক জগতে। কেউ পাশে ছিল না। শেষমেশ নিজেই নিজের মুক্তির ব্যবস্থা করি।”
এই স্বীকারোক্তি এবং পর্ন দুনিয়ায় তাঁর প্রবেশ নিয়ে ভারতজুড়ে চলা আলোচনায় নারীবাদী সংগঠন, মনোবিদরা ও মানবাধিকার কর্মীরা এগিয়ে এসেছেন। তাঁরা বলছেন, আর্চিতার গল্প কেবল তাঁর একার নয়; এ গল্প ভারতের অনেক মেয়ের, যারা নানা চাপে যৌনপেশায় নামতে বাধ্য হয়, কিন্তু তাদের কণ্ঠ কেউ শুনতে চায় না। আবার অনেক রক্ষণশীল মহল বলছে, এরকম একটি কাহিনি ভাইরাল হওয়া সমাজে বিকৃত বার্তা ছড়িয়ে দিতে পারে।
আর্চিতা নিজে অবশ্য এই বিতর্ক নিয়ে একদমই বিচলিত নন। বরং, নিজের ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইলে তিনি লিখেছেন—“আমি লজ্জার মধ্যে বাঁচিনি। আমি নিজের সিদ্ধান্তে বাঁচি।” তাঁর প্রোফাইল এখন সাহসী ফটোশুট, আত্মবিশ্বাসী ক্যাপশন আর নিঃসংকোচ উপস্থাপনায় ভরা। তাঁর ৮ লাখের বেশি ফলোয়ার প্রতিদিন দেখছেন কীভাবে এক প্রাক্তন যৌনকর্মী এখন হয়ে উঠছেন একজন স্বাধীন ও দৃঢ়চেতা নারী।
তবে এই ঘটনাকে ঘিরে উঠে এসেছে এক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন—ভাইরাল হওয়ার পেছনে মানুষের কৌতূহল কতটা মানবিক, আর কতটা নির্মম? ট্রমা যখন কনটেন্টে পরিণত হয়, তখন কোথায় দাঁড়ায় একজন ভুক্তভোগীর সম্মান?
আর্চিতা ফুকনের গল্প শুধুই ভাইরাল হওয়ার গল্প নয়। এটি একজন নারীর নিজেকে খুঁজে পাওয়ার, নিজের শরীর ও আত্মার ওপর অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার, এবং সমাজের চাপে না নত হয়ে নিজের ভবিষ্যৎ নিজেই গড়ে তোলার এক অসাধারণ উদাহরণ। বিতর্ক থাকবে, প্রশংসাও হবে—কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা, তিনি আজ নিজের গল্প নিজেই বলতে পারছেন। তাঁর ভাষায়, “আমি আর কারও মালিকানায় নেই।”