বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, দেশের রাজনৈতিক সংকটের মূলে থাকা ষড়যন্ত্র এখনো শেষ হয়নি। প্রশাসনের ভেতরে এখনো ‘স্বৈরাচারের ভূত’ লুকিয়ে আছে, যা গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শনিবার (১২ জুলাই) বিকালে রাজধানীর একটি হোটেলে ছাত্রদলের অমর শহীদদের স্মরণ এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তারেক রহমান সরকারের প্রতি একের পর এক প্রশ্ন তুলে ধরেন।
তারেক রহমান বলেন, “সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক পরিস্থিতি কে বা কারা বাধাগ্রস্ত করছে? গত বছরের জুলাই অভ্যুত্থানে যারা নিহত হয়েছেন, তাদের বিচার আজও কেন অনিশ্চিত?” তিনি জানান, ঘটনার তিন মাস আগেই বিএনপি ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ ও ‘সংস্কার রূপরেখা’ দিয়েছে, এখন দায়িত্ব বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের।
শহীদ পরিবারের সদস্যদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, “আপনারা যে কষ্টের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, তা অনেকে বোঝেন না। যারা এমন পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে গিয়েছেন, তারাই জানেন এর যন্ত্রণা কতটা গভীর। স্বৈরাচারী শাসনের ১৬ বছরে বহু মানুষ তাদের স্বজন হারিয়েছে। আমরা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আপনাদের পাশে দাঁড়াতে চেষ্টা করেছি।”
তারেক রহমান আরও বলেন, “যারা জীবন দিয়েছেন, তারা চেয়েছিলেন এই দেশে পরিবর্তন আসুক—মানুষের জীবনে একটু আশার আলো ফুটুক। দেশের মানুষ যেন স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশ করতে পারে। আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করছি।”
তিনি দাবি করেন, দেশের মানুষ বিশ্বাস করে বিএনপি সরকার পরিচালনার অভিজ্ঞতা রাখে এবং আগামীতে তারাই ক্ষমতায় আসবে। তার ভাষায়, “টিভির টকশোগুলোতেও এখন মানুষ বলে—বিএনপি এই বিষয়ে এই পলিসি নিক, ছাত্র-শ্রমিক নিয়ে এই সিদ্ধান্ত নিক। কেন বলে? কারণ তারা ধরে নিয়েছে, ভবিষ্যতে বিএনপি-ই দেশ চালাবে।”
বর্তমান সময়ে মিডিয়া ও কিছু রাজনৈতিক মহলে ‘বিএনপি সংস্কার মানছে না’—এই প্রচারণা চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, “যদি সব মেনেই নিতে হতো, তাহলে আলোচনার প্রয়োজন কী ছিল? সরকার নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়ে দিতে পারত। এখন কিছু মিডিয়া বলছে—বিএনপি এটা মানছে না, অথচ অন্যরা সব মেনে নিচ্ছে।”
সরকারের জননিরাপত্তা ব্যর্থতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। বলেন, “আমরা বারবার বলেছি—অন্যায় যেই করুক, তাকে যেন প্রশ্রয় না দেওয়া হয়। সরকারের মূল দায়িত্ব জনগণের জানমাল রক্ষা করা। কিন্তু গতকাল ঘটে যাওয়া ঘটনার পর আমরা হতবাক—স্ক্রিনে হত্যাকারীকে দেখা গেলেও এখনো তাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।”
তিনি আরও জানান, “বিএনপি নিজের তদন্তে যাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ পেয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে ব্যবস্থা নিয়েছে। তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখনো নীরব কেন?”
তারেক রহমানের বক্তব্যে উঠে এসেছে—বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি শুধু দমন-পীড়ন নয়, বরং একটি বৃহৎ ষড়যন্ত্রের অংশ। এই ষড়যন্ত্রের উৎস প্রশাসনের ভিতরে ও বাইরে উভয় জায়গাতেই বিদ্যমান বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।