ঈশ্বরদীর সাঁড়া ইউনিয়নে বালুমহাল দখলকে কেন্দ্র করে আবারও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার (১২ জুলাই) দুপুরে উপজেলার সাঁড়া ঘাট ও ইসলামপাড়া ঘাটে সশস্ত্র হামলা চালিয়ে এলোপাথাড়ি গুলিবর্ষণ করে সন্ত্রাসীরা। এতে সোহান মোল্লা (২৮) নামের এক রাখাল গুলিবিদ্ধ হন।
গুলিবিদ্ধ সোহান ঈশ্বরদীর মাজদিয়া চৌধুরী পাড়ার বাসিন্দা এবং সাহাবউদ্দিন মোল্লার ছেলে। তাকে প্রথমে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়, পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় পাবনা জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নাটোরের লালপুর উপজেলার একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক গোষ্ঠীর নেতৃত্বাধীন ‘কাকন বাহিনী’ ইতিপূর্বেও ঈশ্বরদী এলাকার একাধিক বালুমহাল দখলের চেষ্টা করেছে। ভেড়ামারা, দৌলতপুর, লালপুরসহ আশপাশের এলাকার বালুমহাল নিয়ন্ত্রণে রাখা এই বাহিনী দীর্ঘদিন ধরে সাঁড়া ঘাট দখলে নিতে মরিয়া হয়ে আছে। তবে সাঁড়া ঘাটের বৈধ ইজারাদার থাকায় বারবার তারা বাধার মুখে পড়েছে।
সেদিনের হামলার সময় গুলিবিদ্ধ রাখাল সোহান মোল্লা বলেন,
“আমি গরুর খাস কাটছিলাম। হঠাৎ করে একটা স্পিডবোট আর নৌকা করে লোকজন এসে গুলিবর্ষণ শুরু করে। আমি একটু উঁচু হয়ে দেখতে গেলে গুলি এসে হাতে লাগে। পরে সবাই আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।”
এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে ঘাটের বৈধ ইজারাদার মেহেদী হাসান বলেন,
“আমরা বৈধভাবে ইজারা নিয়ে বালু ব্যবসা করছি। অথচ লালপুরের আওয়ামী লীগ নেতা কাকন বাহিনী চাঁদা দাবি করছে। চাঁদা না দিলে আমাদের ওপর গুলি চালায়। শুধু ব্যবসায়ীরাই না, স্থানীয় কৃষকরাও তাদের সন্ত্রাসী তৎপরতার কারণে ভয়ে কাজ করতে পারছে না।”
ঘটনার পর থেকে পুরো ঘাট এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে ঈশ্বরদী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মনিরুল ইসলাম জানান,
“ঘটনার খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে এসেছি। একজন রাখাল গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে জানতে পেরেছি।”
ঈশ্বরদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুন নূর বলেন,
“ঘটনাটি নদীর মধ্যবর্তী এলাকায় ঘটেছে, যেটি নৌ পুলিশের আওতাভুক্ত। তারপরও ঘাট এলাকায় আমাদের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।”
উল্লেখ্য, এই সাঁড়া ঘাটেই গত ৫ জুন ‘ফিল্মি স্টাইলে’ গুলি চালিয়েছিল কাকন বাহিনী। সেই ঘটনার ভিডিও এবং ছবি দেশজুড়ে ভাইরাল হয়, এবং তখনও ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর কিছুদিন তারা থেমে থাকলেও, শনিবারের গুলিবর্ষণের ঘটনায় আবারও আতঙ্ক আর উত্তেজনা ফিরে এসেছে এলাকাজুড়ে।