পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের সামনে প্রকাশ্যে ভাঙারি ব্যবসায়ী মো. সোহাগ ওরফে লাল চাঁদকে নির্মমভাবে পিটিয়ে ও কংক্রিটের টুকরো দিয়ে মাথা থেঁতলে হত্যার ঘটনায় দেশের বিভিন্ন মহলে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে, আর এখন পর্যন্ত পুলিশ ও র্যাব অভিযানে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে রয়েছেন যুবদল ও ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা-কর্মী।
শনিবার (১২ জুলাই) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিব উল্লাহ গিয়াসের আদালতে দুই আসামি তারেক রহমান রবিন ও টিটন গাজী হাজির হন। অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার রবিন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হলে তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার এসআই মনির হোসেন জীবন তার জবানবন্দি রেকর্ডের আবেদন করেন। বিচারক তা গ্রহণ করে রবিনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
আদালত থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের উদ্দেশে রবিন বলেন,
“আমি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত না। কিন্তু আমি দোষী হিসেবে পরিচিত হয়ে গেছি। আর ৮ দিন পর আমার পর্তুগালের ফ্লাইট ছিল। ওই ভিসা ও ট্রাভেল বাবদ ২২ লাখ টাকা খরচ করেছি। আমি ফাইসা গেছি।”
তিনি জানান, ঘটনার সময় তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন না এবং তাকে সন্দেহের বশে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
“আমার জীবনটা শেষ হয়ে গেছে। আম্মু অসুস্থ হয়ে গেছেন, ডায়াবেটিস ধরা পড়েছে। আর কিছু বলতে চাই না,”—কান্নাজড়ানো কণ্ঠে বলেন রবিন।
রবিনের কাছ থেকে একটি একে-৪৭ রাইফেল উদ্ধারের দাবি করেছে পুলিশ। তিনি হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের সঙ্গে নিজের কোনো সম্পর্কও অস্বীকার করেন।
অন্যদিকে, একই মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া টিটন গাজী আদালতে জানান, তিনি কেবল ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন, তবে কাউকে আঘাত করেননি বা মারধরের নির্দেশও দেননি।
“আমি ওই ভিডিওতে পেস্ট কালারের গেঞ্জি পরা ছিলাম। মনোযোগ দিয়ে দেখলে বোঝা যাবে, আমি কেবল দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমি কাউকে মারার হুকুমও দিইনি,”—বলেন টিটন।
বিচারক যখন জানতে চান, তার কোনো আইনজীবী আছে কি না, টিটন জানান, তার পক্ষে কেউ নেই। আদালত তার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
প্রসঙ্গত, গত ৯ জুলাই বিকালে মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর গেটের সামনে মো. সোহাগ ওরফে লাল চাঁদকে কংক্রিটের টুকরো ও লাঠি দিয়ে মাথা ও শরীর থেঁতলে হত্যা করা হয়। হত্যার পরে লাশের ওপর দাঁড়িয়ে কয়েকজন লাফ দেয়—এমন একটি মর্মান্তিক ভিডিও ভাইরাল হলে দেশজুড়ে ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটে।
এ ঘটনায় নিহত সোহাগের বড় বোন একটি হত্যা মামলা করেন এবং পুলিশ অস্ত্র আইনে আরেকটি মামলা দায়ের করে। বিএনপি হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের পাঁচজনকে বহিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে মাহমুদুল হাসান মহিন ও রবিন দুই দিনের রিমান্ডে ছিলেন। রিমান্ড শেষে রবিন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন, তবে হত্যায় সম্পৃক্ততা অস্বীকার করে নিজেকে “ভুল মানুষ” হিসেবে ফাঁসানোর অভিযোগ তুলেছেন।