মিষ্টি আলু, বৈজ্ঞানিক নাম Ipomoea batatas, আমাদের দেশের কৃষিভিত্তিক সমাজে পরিচিত একটি সহজলভ্য কন্দজাত সবজি। মাটির নিচে জন্ম নেওয়া এই মসৃণগঠনের শেকড়টি শুধু স্বাদের দিক থেকেই নয়, পুষ্টিগুণের বিচারে একেবারে শ্রেষ্ঠ সারিতে জায়গা করে নিয়েছে। একে ‘প্রাকৃতিক সুগন্ধি মিষ্টান্ন’ বলা যায়, কারণ এতে রয়েছে প্রাকৃতিক চিনি ও অনেক গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান, যা শরীরের জন্য উপকারী এবং কিছু ক্ষেত্রে ওষুধের বিকল্প হিসেবেও কাজ করে।
প্রতি ১০০ গ্রাম সিদ্ধ মিষ্টি আলুতে থাকে প্রায় ৮৬ ক্যালোরি শক্তি, ৩ গ্রাম খাদ্যতন্তু, এবং উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ভিটামিন সি, ভিটামিন বি৬, পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, এবং বিটা-ক্যারোটিন। বিটা-ক্যারোটিন শরীরে গিয়ে ভিটামিন এ-তে রূপান্তরিত হয়, যা দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়া এতে ফ্ল্যাভোনয়েড ও পলিফেনলের মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা কোষের বার্ধক্য ও ক্যান্সার সৃষ্টিকারী ফ্রি র্যাডিকেলের বিরুদ্ধে কাজ করে।
মিষ্টি আলুতে প্রাকৃতিক চিনি থাকলেও, এর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) সাদা আলুর তুলনায় অনেক কম—বিশেষ করে যখন এটি সিদ্ধ করে খাওয়া হয়। এর ফলে এটি রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে দেয় না। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, মিষ্টি আলুর মধ্যে থাকা একটি সক্রিয় যৌগ, Ipomoea batatas polyphenols, টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীদের ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে এটি একটি প্রাকৃতিক ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণকারী উপাদান হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
মিষ্টি আলুর মধ্যে থাকা উচ্চমাত্রার ফাইবার অন্ত্রের গঠন ভালো রাখে, কোষ্ঠকাঠিন্য কমায় এবং উপকারী ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। আবার পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং হৃদযন্ত্রের স্বাভাবিক ছন্দ বজায় রাখে। এ কারণে এটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
বিভিন্ন গবেষণায় বলা হয়েছে যে, গাঢ় বেগুনি বা কমলা রঙের মিষ্টি আলুতে থাকা অ্যান্থোসায়ানিন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোলন, স্তন ও ফুসফুসের ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিকে ধ্বংস করতে পারে। এটি কোষের ক্ষয় ও অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধির বিরুদ্ধে একটি প্রাকৃতিক ঢাল তৈরি করে।
মিষ্টি আলু শুধু একাই নয়, কিছু নির্দিষ্ট খাবারের সঙ্গে মিলিয়ে খেলেও এর পুষ্টিগুণ দ্বিগুণ হয়ে যায়:
দারুচিনিতে রয়েছে অ্যান্টি-ডায়াবেটিক বৈশিষ্ট্য। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। মিষ্টি আলুর সঙ্গে এক চিমটি দারুচিনি গুঁড়া ছিটিয়ে খেলেই এই দুটি উপাদানের সম্মিলিত প্রভাব পাওয়া যায়, বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য।
মিষ্টি আলু ভাপিয়ে বা হালকা ভেজে নিয়ে এর ওপরে সামান্য এক চামচ অলিভ অয়েল ছড়িয়ে নিলেই শরীরে ভালো চর্বি বা ‘হেলদি ফ্যাট’ যোগ হয়, যা হৃদযন্ত্র ভালো রাখে এবং বিটা-ক্যারোটিনের শোষণ ক্ষমতা বাড়ায়।
আদা একটি অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান যা হজমে সহায়তা করে এবং প্রদাহ কমায়। মিষ্টি আলুর সঙ্গে আদা মিশিয়ে সুপ বা ভর্তা তৈরি করলে শরীরের দেহতাপ ও গ্যাসের সমস্যা হ্রাস পায়।
মিষ্টি আলুতে আয়রন শোষণের ক্ষমতা বাড়ে যখন তা ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবারের সঙ্গে খাওয়া হয়। পালং শাক বা লাল শাকের মতো শাকের সঙ্গে মিষ্টি আলু রান্না করলে রক্তস্বল্পতা কমাতে সাহায্য করে এবং দেহে আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে।