বিদেশে শিক্ষার নামে ২০০ কোটি আত্মসাৎ: গ্রেপ্তার বিএসবি গ্লোবালের চেয়ারম্যান খায়রুল বাশার, ভুক্তভোগীদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া
বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগের প্রলোভন দেখিয়ে হাজার শিক্ষার্থীর কাছ থেকে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্কের চেয়ারম্যান লায়ন এম. কে খায়রুল বাশার বাহারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
সোমবার (১৪ জুলাই) তাকে রাজধানী থেকে গ্রেপ্তার করে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট। সিআইডির মিডিয়া শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “মানি লন্ডারিং মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ বিষয়ে আইনগত প্রক্রিয়া চলমান।”
গত বছরের ১৭ অক্টোবর অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে অভিযোগ তুলে ধরে শতাধিক ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। তারা জানান, বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্ক আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং অন্যান্য উন্নত দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করানোর প্রলোভনে গড়ে ২০ লাখ টাকা করে আদায় করে।
শিক্ষার্থী রুমন আলী লস্করের পাঠ করা লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সেশন ফি বাবদ টাকা নিয়ে বৈধ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে তা বিদেশে পাচার করে এবং অনেক ক্ষেত্রে ভুয়া অফার লেটার তৈরি করে প্রতারণা করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী স্টুডেন্ট অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাঠানোর কথা থাকলেও, তা না করে তারা মানি লন্ডারিং আইনের লঙ্ঘন করেছে।
ভুক্তভোগীরা জানান, ২০২৪ সালের ২৭ আগস্ট খায়রুল বাশার ও শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি দলের মধ্যে একটি স্ট্যাম্পে লিখিত চুক্তি হয়। তাতে বলা হয়, ৩টি কিস্তিতে ২৩ সেপ্টেম্বর, ২২ অক্টোবর এবং ২৫ নভেম্বরের মধ্যে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে টাকা ফেরত দেওয়া হবে। কিন্তু প্রথম কিস্তির দিন তিনি টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হন এবং উল্টো তার লোকজন দিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান। সেই হামলায় অনেক শিক্ষার্থী আহত হন, যা গুলশান থানা পুলিশ অবগত রয়েছে।
খায়রুল বাশারের গ্রেপ্তারের খবর শিক্ষার্থীদের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ও আশার সঞ্চার করলেও, এর পাশাপাশি রয়েছে গভীর সংশয়। অনেকেই বলছেন, “বাংলাদেশে কাউকে গ্রেপ্তার হলেই সমস্যার সমাধান হয় না। মামলার দীর্ঘসূত্রতা, প্রভাবশালী মহলের হস্তক্ষেপ ও দুর্বল আইনি কাঠামোর কারণে টাকাগুলো ফেরত পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।”
ভুক্তভোগীরা আরও বলছেন, তারা শুধু প্রতারণার শিকার নন—তারা দীর্ঘ এক বছর ধরে হয়রানি, হুমকি এবং আশাহত প্রতীক্ষার মধ্য দিয়ে দিন পার করছেন। এ ঘটনায় দ্রুত বিচার ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে তারা আবারও প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এদিকে অর্থ আত্মসাৎ, প্রতারণা ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে খায়রুল বাশারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ভুক্তভোগীদের পরিবার ও নাগরিক সমাজ।
সংক্ষিপ্ত প্রেক্ষাপট: