সুস্থভাবে খাওয়ার প্রথম ধাপটাই হচ্ছে চিনি কমানো। তবে যখন স্বাস্থ্যকর মিষ্টির প্রসঙ্গ আসে, তখনই প্রশ্ন জাগে—ডার্ক চকলেট না খেজুর, কোনটি ভালো? পুষ্টিবিদরা বলছেন, এই দুটো খাবারের পুষ্টিগুণ ভিন্ন, কিন্তু স্বাস্থ্য উপকারিতা বিচার করলে কে এগিয়ে?
আজকের জীবনধারা এক ধরনের বিপরীত বাস্তবতা। একদিকে মানুষ সারাক্ষণ মোবাইল স্ক্রিনে চোখ রাখে, অন্যদিকে আবার ডেইলি স্টেপ কাউন্ট মেটাতে মরিয়া। কেউ গ্লুটেন এড়িয়ে চলে, কেউ জাঙ্ক ফুড বর্জনের চেষ্টা করে, কিন্তু ডেসার্টের লোভ সামলানো কঠিন।
এই বাস্তবতায়, স্বাস্থ্যকর খাওয়ার প্রয়াসে আমরা মিষ্টিজাত খাবারে কম ঝুঁকতে চাই। আর তখনই তুলনা চলে আসে ডার্ক চকলেট আর খেজুরের মধ্যে। যদিও দুটোরই পুষ্টিগুণ রয়েছে, কোনটি সত্যিই বেশি স্বাস্থ্যকর?
ডার্ক চকলেটকে অনেক পুষ্টিবিদই হার্টের জন্য ভালো বলেন। এতে কোকো যত বেশি, ততই চিনির পরিমাণ কম হয়। তাই ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ কোকোযুক্ত ডার্ক চকলেট খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
অন্যদিকে খেজুরকে বলা হয় প্রকৃতির মিষ্টান্ন। তবে এতে প্রাকৃতিক চিনির পরিমাণ অনেক বেশি—প্রায় ১০০ গ্রামে ৬৮.৮৪ গ্রাম। এছাড়া, এর উচ্চ গ্লাইসেমিক লোড থাকায় এটি আরও বেশি মিষ্টি খাওয়ার আগ্রহ বাড়িয়ে দিতে পারে।
ডার্ক চকলেট কেবল স্বাদের উৎস নয়, এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টেও ভরপুর। বিশেষত, যখন এতে ৭৫ শতাংশের বেশি কোকো থাকে, তখন এতে ফ্ল্যাভোনয়েড যেমন ইপিক্যাটেচিন ও ক্যাটেচিন পাওয়া যায়। এগুলো হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা উন্নত করে, রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে এবং ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায়।
খেজুরে পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম এবং ভিটামিন বি৬ থাকলেও, এর উচ্চ প্রাকৃতিক চিনি থাকায় হৃদযন্ত্রের উপকারিতা তুলনামূলকভাবে কম।
খেজুরে রয়েছে প্রচুর ফাইবার—দুইটি মাঝারি আকারের খেজুরে প্রায় ৩.৩ গ্রাম। যা হজমে সাহায্য করে এবং পেট ভরিয়ে রাখে।
ডার্ক চকলেটেও তৃপ্তি পাওয়ার উপাদান রয়েছে। এতে থাকা পলিফেনল GLP-1 ও PYY নামের হরমোনের নিঃসরণ বাড়ায়, যা ক্ষুধা কমায় এবং অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা দমন করে।
এই দিক দিয়ে খেজুর ও ডার্ক চকলেট—উভয়েরই নিজস্ব গুণ আছে। খেজুরে রয়েছে পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন এবং প্রচুর ফাইবার, যা অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। তবে যাদের চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়, তাঁদের জন্য ডার্ক চকলেট অপেক্ষাকৃত ভালো বিকল্প, বিশেষত আনসুইটেন্ড হলে।
ডার্ক চকলেটেও রয়েছে আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম এবং কপার। তবে সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রোফাইল, যা খেজুরের চেয়ে উন্নত এবং প্রদাহ কমাতে ও হৃদযন্ত্র ভালো রাখতে সহায়ক।
এছাড়াও মানসিক স্বাস্থ্যের দিকেও ডার্ক চকলেটের একটি প্রভাব রয়েছে। অল্প করে খাওয়ার মাধ্যমে মন ভালো হয়ে যায়, যদিও মাত্রাতিরিক্ত খাওয়া অবশ্যই ঠিক নয়।
সবশেষে, কোনটি খাবেন তা নির্ভর করে আপনার ব্যক্তিগত খাদ্যাভ্যাস ও স্বাস্থ্য লক্ষ্য্যের ওপর। তবে হৃদযন্ত্রের যত্ন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের দিক থেকে ডার্ক চকলেট খানিকটা এগিয়ে। এটি ফ্ল্যাভানল-সমৃদ্ধ, যা অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায়, রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে এবং প্রদাহ হ্রাস করে।
অন্যদিকে, হজমের জন্য খেজুর অত্যন্ত উপকারী হলেও এর উচ্চ গ্লাইসেমিক সূচক চিন্তা করার মতো।
তবে এক কথায় বলা যায়—প্রক্রিয়াজাত মিষ্টির পরিবর্তে এই দুটি প্রাকৃতিক মিষ্টান্নই ভালো, যদি তা সীমিত ও সচেতনভাবে খাদ্যতালিকায় রাখা যায়।