সুদানে পুনরায় ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। উত্তর কোরদোফান রাজ্যে আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (RSF)-এর হামলায় প্রায় ৩০০ মানুষ নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছে স্থানীয় মানবাধিকার আইনজীবীদের সংগঠন “ইমার্জেন্সি লইয়ার্স”। নিহতদের মধ্যে শিশু ও অন্তঃসত্ত্বা নারীও রয়েছেন।
সোমবার (১৪ জুলাই) রাতে দেওয়া এক বিবৃতিতে সংগঠনটি জানায়, দেশটির পশ্চিমাঞ্চলে সুদানি সেনাবাহিনী ও RSF-এর মধ্যে চলমান গৃহযুদ্ধের অংশ হিসেবে উত্তর কোরদোফানের বারা শহরের আশেপাশের কয়েকটি গ্রামে শনিবার এই হত্যাকাণ্ড চালানো হয়। উল্লেখ্য, বারা শহর বর্তমানে RSF-এর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, শাগ আলনোম গ্রামে অন্তত ২০০ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। তাদের কেউ ঘরের ভেতর পুড়িয়ে, আবার কাউকে গুলি করে হত্যা করা হয়। পাশের গ্রামগুলোতেও ৩৮ জন নিহত হন, এবং অনেককে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যাওয়া হয়—যাদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
এর পরদিন, রবিবার, RSF আবারও হামলা চালায় হিলাত হামিদ গ্রামে। সেখানে অন্তত ৪৬ জনকে হত্যা করা হয়, যাদের মধ্যেও অন্তঃসত্ত্বা নারী ও শিশু ছিল। ইমার্জেন্সি লইয়ার্স জানায়, এই গ্রামগুলোতে কোনো সামরিক লক্ষ্য ছিল না, ফলে এই হামলাগুলোকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। সংগঠনটি RSF নেতৃত্বকেই এ দায়ভার বহনের জন্য দায়ী করে।
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (IOM) জানিয়েছে, এই সহিংসতার কারণে শাগ আলনোম ও আল-কোরদি গ্রামের অন্তত ৩ হাজার মানুষ পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। তারা আশ্রয় নিয়েছেন বারা শহরের আশপাশের এলাকায়।
RSF-এর বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং গণহত্যার অভিযোগ রয়েছে। দেশজুড়ে যেসব এলাকায় তারা নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে, সেসব এলাকায় লুটতরাজ, নারী নির্যাতন এবং সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। যদিও RSF নেতৃত্ব বলেছে, যেসব সৈন্য এমন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে।
সুদানের এই গৃহযুদ্ধ বর্তমানে বিশ্বে সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকট তৈরি করেছে। দেশটির অর্ধেকেরও বেশি মানুষ ক্ষুধা, রোগ ও নিরাপত্তাহীনতার শিকার। কলেরার মতো রোগ ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৪০ হাজার মানুষ নিহত এবং ১ কোটি ৩০ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এরমধ্যে বিশেষভাবে পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে মানবিক পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (ICC) এ অঞ্চলজুড়ে নতুন করে যুদ্ধাপরাধ তদন্ত শুরু করেছে।
গত সপ্তাহে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে দেওয়া বক্তব্যে আদালতের প্রধান কৌঁসুলি নাজহাত শামীম খান বলেন, তার অফিসের কাছে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ রয়েছে যা দারফুরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হওয়ার বিষয়টি সমর্থন করে। তিনি জানান, পাশের দেশ চাদে পালিয়ে যাওয়া অনেক ভুক্তভোগীর সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, “মানুষকে খাবার ও পানির অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। মুক্তিপণের জন্য অপহরণ এখন সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
এই ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘন ও যুদ্ধাপরাধের ঘটনায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের গভীর উদ্বেগ ও নিন্দা জানানো হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত সংঘাত বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
সূত্র: আল-জাজিরা