দেশজুড়ে শিক্ষক সংকট মোকাবিলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৭৩ হাজারেরও বেশি শূন্য পদে শিগগিরই নিয়োগ দেবে সরকার। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এ লক্ষ্যে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার প্রস্তুতি চূড়ান্ত করেছে। এসব পদে দ্রুত নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বিজ্ঞপ্তি প্রস্তুত, অপেক্ষায় শুধু অনুমোদনের
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর জানায়, সারাদেশের শূন্যপদের তালিকা তৈরি হয়েছে। এখন নিয়োগ বিধির কিছু দিক—বিশেষ করে কোটা সংশোধন ও প্রধান শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)-এর মতামতের অপেক্ষায় আছে তারা। অনুমোদন পেলেই নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে।
কোটা সংস্কারে মেধার অগ্রাধিকার
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিদ্যালয়) মাসুদ আকতার খান বলেন, “বর্তমানে প্রাথমিকে ৬০ শতাংশ নারী কোটা রয়েছে। তবে উচ্চ আদালতের রায়ে মেধার ভিত্তিতে ৯৩ শতাংশ নিয়োগের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী নিয়োগ বিধি হালনাগাদ করতে হবে।” তিনি আরও জানান, বিধির চূড়ান্ত রূপ পাওয়ার পরই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে।
বিস্তৃত সংকট: প্রধান ও সহকারী শিক্ষক ঘাটতি
বর্তমানে দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৬৫ হাজার ৫৬৭টি। এসব বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষক পদের সংখ্যা ৪ লাখ ২২ হাজার ১১০টি। এর মধ্যে প্রধান শিক্ষক পদ ৬৫ হাজার ৪৫৭টি, যার মধ্যে শূন্য রয়েছে ৩৪ হাজার ১০৬টি। চলতি দায়িত্বে আছেন ১৩ হাজার ৬৭৫ জন সহকারী শিক্ষক। অন্যদিকে সহকারী শিক্ষক পদের সংখ্যা ৩ লাখ ৫৫ হাজার ৬৫৩টি, যার মধ্যে শূন্য রয়েছে ২৪ হাজার ৫৩৬টি।
নিয়োগে দীর্ঘসূত্রতা, প্রশাসনিক জটিলতা, আদালতের মামলা, পরীক্ষার বিলম্ব এবং পদোন্নতিতে ধীরগতি—সব মিলিয়ে শিক্ষক সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে।
নতুন পদ সৃষ্টি: সহকারী প্রধান শিক্ষক থেকে চারুকলা
শিক্ষার মানোন্নয়নে সরকার নতুন করে আরও ২০ হাজারের মতো পদ সৃষ্টি করছে। এর মধ্যে ৯ হাজার ৫৭২টি সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ ইতোমধ্যে অনুমোদন পেয়েছে, যা পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ হবে।
এছাড়া শারীরিক শিক্ষা, সংগীত ও চারুকলার জন্যও ১০ হাজারের বেশি নতুন পদ সৃষ্টির কাজ চলছে। এসব পদে অঞ্চলভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হবে।
সব পদে একসঙ্গে বিজ্ঞপ্তির পরিকল্পনা
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যখন শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে, তখন সব ধরনের নতুন ও বিদ্যমান শূন্য পদের বিজ্ঞপ্তি একসঙ্গে প্রকাশের পরিকল্পনা রয়েছে।