কুমিল্লার এক তরুণ অটোরিকশা চালক, অনিক হাসান (২৫), আজ নগরবাসীর কাছে সততার জীবন্ত উদাহরণ। এক যাত্রীর ফেলে যাওয়া ১৫ লাখ টাকা ভর্তি ব্যাগ তিনি খুঁজে বের করে অক্ষত অবস্থায় ফিরিয়ে দিয়েছেন। এই অনন্য কাজের জন্য সর্বত্র প্রশংসায় ভাসছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) সকালে এক অভিভাবক তাড়াহুড়ায় তার সন্তানকে স্কুলে পৌঁছে দিতে গিয়ে টাকা ভর্তি একটি নীল পলিথিন ব্যাগ অনিকের অটোরিকশায় ফেলে যান। কিছু সময় পর বিষয়টি বুঝতে পেরে তিনি ব্যাগ খুঁজতে বের হন, কিন্তু অটোরিকশাটি তখন আর খুঁজে পাননি।
অনিকের বাড়ি কুমিল্লা নগরের চৌধুরীপাড়া এলাকায়। তাদের পরিবারে অভাব রয়েছে, এবং তার বাবা নিজেও একজন অটোরিকশা চালক। ঘটনার দিন সকালে মরণ সূত্রধর নামে এক ব্যক্তি তার মেয়েকে স্কুলে নামিয়ে দেন অনিকের অটোরিকশায়। ফেরার পথে তিনি ভুলবশত ওই টাকার ব্যাগটি গাড়িতে ফেলে যান।
অনিক জানান, যাত্রী নামিয়ে দিয়ে রাজগঞ্জ এলাকায় একটি চা দোকানে বসেছিলেন তিনি। তখন হঠাৎ চোখ পড়ে সিটে পড়ে থাকা নীল ব্যাগের দিকে। খুলে দেখেন, ভেতরে অনেক টাকা। মুহূর্তেই তিনি বাবাকে ফোন করেন। তার বাবা তাকে বলেন:
“যার টাকা, তাকে খুঁজে বের করে ফিরিয়ে দে আয়।”
এরপর অনিক আবার বজ্রপুর এলাকার সেই স্কুলে যান। যদিও প্রথমবারে যাত্রীকে খুঁজে পাননি, কয়েকবার ফিরে গিয়ে সকাল পৌনে ৯টার দিকে টাকার মালিক মরণ সূত্রধরকে খুঁজে বের করেন এবং ব্যাগটি ফিরিয়ে দেন।
মরণ সূত্রধর, নগরের ছাতিপট্টি এলাকার একজন স্বর্ণ ব্যবসায়ী, বলেন:
“টাকা হারানোর পর মনে হয়েছিল আর পাওয়া যাবে না। কুমিল্লার বেশিরভাগ অটোরিকশা চালকই বিভিন্ন জেলা থেকে আসেন। কিন্তু অনিকের সততার জন্য আমি টাকা ফিরে পেলাম। আমি তার প্রতি চিরকাল কৃতজ্ঞ। এমন সততা আজকাল কল্পনাও করা যায় না।”
অনিক বলেন:
“আমি প্রথমেই বাবাকে ফোন করি। বাবা একবাক্যে বলেন, ‘অন্যের টাকা নিয়ে বাঁচতে চাই না।’ এরপর আমি যাত্রীকে খুঁজে বের করে টাকা ফেরত দিই। এতে আমি মানসিক শান্তি পেয়েছি। ভাবিনি ঘটনাটি ভাইরাল হবে। আমার পরিবার সব সময় আমাকে সততার শিক্ষা দিয়েছে।”
অনিক হাসানের এই কাজ আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়—আর্থিক অভাব, চ্যালেঞ্জ বা প্রলোভনের মধ্যেও সততা বেছে নেওয়া সম্ভব। তার মতো তরুণদের মাধ্যমে সমাজে আবারও আশা জাগে, মানবতা ও নৈতিকতা এখনো বেঁচে আছে।
এমন সাহসী ও সততার গল্প সবার জানা উচিত। অনিকের জন্য আমরা সকলে গর্বিত।