বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল এন্ড কলেজ ঐক্য পরিষদের শীঘ্রই মাঠে নামার হুঁশিয়ারি
চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) দেশের সব উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারদের কাছে এ বিষয়ে চিঠি পাঠিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর। তবে এই পরীক্ষায় কেবল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পিটিআই সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয় ও সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই অংশ নিতে পারবে। এতে কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের সুযোগ থাকছে না।
এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছে বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল এন্ড কলেজ ঐক্য পরিষদ। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি ইকবাল বাহার চৌধুরী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্টে জানান, কিন্ডারগার্টেন শিক্ষার্থীদের বাদ দিয়ে কোনো ধরনের প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা গ্রহণ করতে দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, “বৈষম্যবিরোধী সরকারে ও দেশে কোনো প্রকার বৈষম্যের স্থান নেই। এটি একটি চক্রান্ত। একটি কুচক্রী মহল ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টা চালাচ্ছে।”
ইকবাল বাহার চৌধুরী আরও হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “দেশে প্রায় ৫০ হাজার কিন্ডারগার্টেন প্রতিষ্ঠানে ১০ লাখ শিক্ষক এবং প্রায় ১ কোটি শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের বাদ দিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হলে বড় ধরনের আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।”
প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষার কারণে বৃত্তি পরীক্ষা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। পরে ২০২২ সালে আবার চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। বিকল্প হিসেবে মেধা ও উপবৃত্তি চালু রাখা হয়। তবে দীর্ঘদিন পর বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এবার আনুষ্ঠানিকভাবে বৃত্তি পরীক্ষা চালু করতে যাচ্ছে।
উপজেলা শিক্ষা অফিসারদের পাঠানো চিঠি অনুযায়ী, ২১ থেকে ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলা, ইংরেজি, প্রাথমিক গণিত এবং বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় ও প্রাথমিক বিজ্ঞান (যথাক্রমে ৫০% করে একত্রে)—এই চার বিষয়ের ওপর পরীক্ষা নেয়া হবে।
এছাড়া নির্দেশনায় জানানো হয়েছে, সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পিটিআই সংলগ্ন বিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক, এবং প্রথম সাময়িক পরীক্ষার ভিত্তিতে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ অংশ নিতে পারবে।
বেসরকারি কিন্ডারগার্টেনগুলোর দাবি, সরকারি সিদ্ধান্তে তারা বঞ্চিত হলে শিক্ষা ক্ষেত্রে বড় ধরনের বৈষম্য তৈরি হবে, এবং সেটি মেনে নেওয়া হবে না। তারা স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে—এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা না করা হলে রাজপথে নেমে প্রতিবাদ গড়ে তোলা হবে।
বর্তমানে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। তবে কিন্ডারগার্টেন খাতের এই অস্থিরতা নিয়ে শিগগিরই প্রশাসনকে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে হতে পারে—তা না হলে দেশের এক বৃহৎ শিক্ষার্থী গোষ্ঠী চরম অনিশ্চয়তায় পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।