Top Header
Author BartaLive.com
তারিখ: ১৮ জুলাই ২০২৫, ০৩:০১ অপরাহ্ণ

মা ও মেয়ের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের জেরে বরিশালের যুবক কুমিল্লার তিতাসে খুন-পিবিআই

News Image

কুমিল্লা, ১৮ জুলাই:
মা ও মেয়ের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের জেরে বরিশালের যুবক ইমতিয়াজ ওরফে মান্নাকে (২২) কুমিল্লার তিতাসে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। এক নোহা মাইক্রোবাসে করে প্রথমে বরিশাল থেকে তাকে তিতাসে আনা হয়। পরে গাড়ির ভেতরেই তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় এবং মরদেহ সড়কের পাশে ফেলে দেওয়া হয়।

বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) বিকালে কুমিল্লা পিবিআই কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পিবিআই কুমিল্লার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারওয়ার আলম।

তিনি জানান, তথ্যপ্রযুক্তি ও তদন্তের ভিত্তিতে হত্যাকাণ্ডে জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলো বরিশালের কাজীরহাট থানার ছৈয়তক্তা এলাকার মৃত সিরাজুল ইসলাম মোল্লার ছেলে মো. সোহেল ইসলাম (৪০), তার ছেলে শাহীন ইসলাম (১৯) এবং মেহেন্দীগঞ্জ থানার হেসামউদ্দিন এলাকার মৃত জালাল হাওলাদারের ছেলে হানিফ হাওলাদার (৬১)।

ঘটনার পেছনের লোমহর্ষক বিবরণ

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সোহেল ইসলাম ঢাকায় গাড়ি চালাতেন। স্ত্রী ও কিশোরী মেয়েকে রেখে তিনি বরিশাল ফিরে গিয়ে জানতে পারেন, তার স্ত্রীর সঙ্গে ইমতিয়াজের পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। পরবর্তীতে তিনি স্ত্রীর সঙ্গে ঢাকায় ফিরে আসেন এবং মাদরাসাপড়ুয়া মেয়েকে রেখে যান দাদির কাছে।

এরপর ইমতিয়াজ তার স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্কের অশ্লীল ভিডিও ভাইরালের ভয় দেখিয়ে মেয়েটিকেও শারীরিক সম্পর্কে বাধ্য করে। এসব তথ্য জানার পর সোহেল ইসলাম ইমতিয়াজকে হত্যার পরিকল্পনা করেন এবং সেই পরিকল্পনায় যোগ দেয় তার ছেলে শাহীন ও মামা হানিফ।

পরিকল্পিতভাবে হত্যা

১২ জুলাই বরিশাল থেকে একটি খয়েরি রঙের মাইক্রোবাসে ইমতিয়াজকে ঘুরাতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে কুমিল্লার তিতাস উপজেলার জিয়ারকান্দি এলাকায় আনা হয়। তখন গাড়ি চালাচ্ছিলেন শাহীন, মাঝের সিটে ইমতিয়াজের পাশে ছিলেন হানিফ, এবং পেছনের সিটে ছিলেন সোহেল।

গাড়ির ভেতরেই ইমতিয়াজকে প্রথমে ওড়না দিয়ে শ্বাসরোধ করেন সোহেল। পরে মৃত্যু নিশ্চিত করতে সড়কের পাশে গাছতলায় ফেলে দিয়ে গলাকেটে হত্যা করেন। হত্যায় ব্যবহৃত ছুরিটিও লাশের পাশে রেখে পালিয়ে যান ঘাতকরা।

তদন্ত ও গ্রেপ্তার

১৩ জুলাই নিহতের বাবা দুলাল হাওলাদার তিতাস থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। এরপর তদন্তে নামে পিবিআই। পিবিআই’র পরিদর্শক আবু বকর তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তিন ঘাতককে শনাক্ত করতে সক্ষম হন।

১৫ জুলাই মধ্যরাতে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের মুন্সিহাটি এলাকা থেকে সোহেল ও তার ছেলে শাহীনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ১৬ জুলাই রাজাবাজার এলাকা থেকে হানিফ হাওলাদারকেও গ্রেপ্তার করা হয়।

আদালতে স্বীকারোক্তি

পুলিশ সুপার সারওয়ার আলম জানান, গ্রেপ্তার তিনজনকেই বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির করা হয় এবং তারা ১৬৪ ধারায় হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। মামলার তদন্ত এখনো চলমান রয়েছে, আরও কেউ জড়িত থাকলে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।

পরিবারের ক্ষোভ ও বিচার দাবি

নিহত ইমতিয়াজের বাবা দুলাল হাওলাদার জানান, তার ছেলে সৌদি আরবে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, সব কাগজপত্র সম্পন্ন হয়েছিল। সেই ছেলেকে সিলেট ঘোরানোর কথা বলে ফুঁসলিয়ে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

ইমতিয়াজের বড় ভাই রিয়াজ উদ্দিন বলেন,

“প্রেম ভালোবাসা থাকতে পারে, কিন্তু তাই বলে একজন মানুষকে এভাবে জবাই করে হত্যা করা যায়? সোহেলের দাবি যে তার স্ত্রীর সঙ্গে আমার ভাইয়ের সম্পর্ক ছিল তা সত্য নয়। বরং তার মেয়ের সঙ্গে প্রেম ছিল হয়তো। কিন্তু তাই বলে এই নির্মমতা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”

পিবিআইয়ের তৎপরতা

ঘটনার পরপরই পিবিআই’র ক্রাইম সিন ইউনিট ছায়াতদন্ত শুরু করে এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে মূল রহস্য উদ্ঘাটন ও অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হয়।

পিবিআই জানিয়েছে, মামলাটির সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং যতদ্রুত সম্ভব আদালতে চার্জশিট দাখিলের প্রস্তুতি চলছে।

Watermark