Top Header
Author BartaLive.com
তারিখ: ২০ জুলাই ২০২৫, ০১:২৪ অপরাহ্ণ

জাপানে পার্লামেন্ট নির্বাচন: প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার জন্য জনপ্রিয়তার বড় পরীক্ষা

News Image

জাপানে পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষের (Upper House) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যা প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশবা এবং তার নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ জনপ্রিয়তা-পরীক্ষা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

রবিবার (স্থানীয় সময় সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত) দেশজুড়ে ভোটগ্রহণ চলছে। জাতীয় সম্প্রচারকারী এনএইচকে জানায়, এবারের নির্বাচনে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, বিশেষ করে চালের দাম বৃদ্ধি, অনেক ভোটারের প্রধান উদ্বেগ। পাশাপাশি জনসংখ্যা হ্রাস ও বিদেশনীতিও ভোটারদের আলোচনায় রয়েছে।

এবারের নির্বাচনে ২৪৮ আসনের মধ্যে অর্ধেক আসন (১২৪টি) ভোটের জন্য উন্মুক্ত। জনমত জরিপ অনুযায়ী, ইশবার লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) এবং তার জোটসঙ্গী কোমেইতো দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখতে ব্যর্থ হতে পারে। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ৫০টি আসন।

যদিও উচ্চকক্ষে আস্থা ভোটের (no-confidence motion) ক্ষমতা নেই, তবে ভোটে খারাপ ফলাফল ইশবার রাজনৈতিক অবস্থানকে দুর্বল করে তুলতে পারে। এর ফলে এলডিপির ভেতরে থেকেই তাকে পদত্যাগ বা বিকল্প জোট খুঁজে নেওয়ার চাপ আসতে পারে।

জরিপগুলো আরও দেখায় যে ছোট ছোট বিরোধী দলগুলো — যারা কর হ্রাস ও সরকারি ব্যয় বৃদ্ধির পক্ষে — তারা আসন বাড়াতে পারে। এর মধ্যে ডানপন্থী দল সানসেইতো রয়েছে, যারা অভিবাসন সীমিত করা, বিদেশি বিনিয়োগ বন্ধ ও লিঙ্গ-সমতা নীতির বিরোধিতা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

২৫ বছর বয়সী ছাত্র ইউ নাগাই, যিনি সানসেইতো-কে ভোট দিয়েছেন, বলেন, “আমি গ্র্যাজুয়েট স্কুলে পড়ি, কিন্তু আশপাশে কোনো জাপানি নেই—সবাই বিদেশি। বিদেশিদের জন্য যেভাবে ভাতা ও অর্থ ব্যয় হয়, তাতে মনে হয় জাপানিদের যথাযথ সম্মান দেওয়া হচ্ছে না।”

অন্যদিকে, অনেকে আবার বাড়তে থাকা বিদেশি-বিদ্বেষ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ৪৩ বছর বয়সী কনসালটেন্ট ইউকো তসুজি, যিনি তার স্বামীর সঙ্গে ভোট দিয়েছেন, বলেন, তারা এলডিপিকে সমর্থন দিয়েছেন স্থিতিশীলতার জন্য। “সরকার যদি দায়িত্ববান না হয়, তবে রক্ষণশীলরা চরমপন্থার দিকে ঝুঁকবে। তাই আমরা এমন প্রার্থীদের ভোট দিয়েছি যারা বিভাজন নয়, ঐক্যের পক্ষে।”

স্বনির্ভর পেশাজীবী দাইইচি নাসু (৫৭) বলেন, তিনি এমন একটি সমাজ চান যেখানে অভিবাসন ও লিঙ্গ সমতার বিষয়গুলোতে আরও ইতিবাচক পদক্ষেপ থাকবে। “তাই আমি CDPJ (সংবিধানিক গণতান্ত্রিক দল)-কে ভোট দিয়েছি। চাই সমাজে আরও অন্তর্ভুক্তি ও বৈচিত্র্যের প্রসার।”

এবারের নির্বাচনে আগাম ভোটদান উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। এনএইচকের তথ্যমতে, ২ কোটির বেশি ভোটার, যা মোট নিবন্ধিত ভোটারের ২০ শতাংশেরও বেশি, আগাম ভোট দিয়েছেন — যা তিন বছর আগের তুলনায় অনেক বেশি।

৬৮ বছর বয়সী ইশবা, যিনি নিজেকে প্রতিরক্ষা বিষয়ে আগ্রহী ও ট্রেন-প্রেমী হিসেবে পরিচয় দেন, গত বছরের সেপ্টেম্বরে পঞ্চমবারের চেষ্টায় প্রধানমন্ত্রী হন এবং পরের মাসেই দ্রুত নির্বাচন আহ্বান করেন।

তবে সেই অক্টোবরের আগাম নির্বাচনে তার দল জোটের বড় ধাক্কা খায় — নিম্নকক্ষে তাদের আসন ২৭৯ থেকে কমে ২০৯-এ নেমে আসে। এরপর চলতি বছরের এপ্রিলে, ইশবা যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বৃদ্ধির প্রভাব মোকাবিলায় জরুরি অর্থনৈতিক পদক্ষেপ ঘোষণা করেন।

জাপান এখনো যুক্তরাষ্ট্রের ২৫ শতাংশ নতুন শুল্ক থেকে ছাড় পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, যার সময়সীমা ১ আগস্ট পর্যন্ত নির্ধারিত।

উল্লেখ্য, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) ১৯৫৫ সাল থেকে প্রায় নিরবচ্ছিন্নভাবে জাপান শাসন করছে, যদিও নেতৃত্বে ঘনঘন পরিবর্তন হয়েছে।

ইশবা হলেন জাপানের তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী, যিনি ২০২০ সালে শিনজো আবের পদত্যাগের পর দায়িত্বে আসেন। আবে ২০২২ সালে নিহত হন, যার পর তদন্তে তার দল এলডিপি ও ইউনিফিকেশন চার্চের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ফাঁস হয় এবং ব্যাপক জনরোষ সৃষ্টি হয়।

Watermark