বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় দায়ের করা পুলিশ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া কিশোর হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজ (১৭) অবশেষে মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন।
গত ১৫ জুলাই, ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জি এম ফারহান ইশতিয়াক সংশোধিত ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩ (এ) ধারা অনুযায়ী দাখিল করা অন্তর্বর্তী তদন্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে এই আদেশ দেন।
এই ঘটনা দেশের আইনি ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক—নতুন আইনে এটাই প্রথমবারের মতো তদন্তাধীন একটি মামলায় কাউকে অব্যাহতি দেওয়া হলো।
রোববার (২০ জুলাই) ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রসিকিউশন বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার মাঈন উদ্দিন চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
২০২৩ সালের ১৯ জুলাই, যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগ এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশ, আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
সংঘর্ষে এক আন্দোলনকারী নিহত হন। এ সময় পুলিশ সদস্য গিয়াস উদ্দিনকে পিটিয়ে হত্যা করে তার মরদেহ ফুটওভার ব্রিজে ঝুলিয়ে রাখা হয় এবং তার মোটরসাইকেলটি চুরি হয়ে যায়।
এই ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানায় হত্যা মামলা হয় এবং পুলিশ ৮ জনকে গ্রেপ্তার করে। মামলার এজাহারে ১৬ নম্বর আসামি হিসেবে ফাইয়াজের নাম উঠে আসে।
তাকে মাতুয়াইলের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে হাতে দড়ি বেঁধে আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তার সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
একজন কিশোরকে এইভাবে গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে নেওয়া ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। এরপর আদালত তাকে জামিন দেন।
তদন্তকারী সংস্থা ডিএমপির গোয়েন্দা (ওয়ারী) বিভাগ ১৩ জুলাই আদালতে অন্তর্বর্তী তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে জানায়, ফাইয়াজের বিরুদ্ধে অভিযোগের সপক্ষে কোনো প্রমাণ মেলেনি।
তদন্ত কর্মকর্তা, গোয়েন্দা বিভাগের পুলিশ পরিদর্শক মোল্লা মো. খালিদ হোসেন বলেন, “তদন্ত শেষ হতে সময় লাগবে, কিন্তু যেহেতু ফাইয়াজের সংশ্লিষ্টতা নেই, তাই তাকে নতুন আইনে অব্যাহতির আবেদন করা হয়।”
তবে মামলার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চলমান থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
এ ঘটনা কিশোরদের প্রতি বিচারব্যবস্থার দায়িত্বশীলতা ও মানবিকতা নিয়ে নতুন করে আলোচনা তৈরি করেছে।