রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে বহু শিক্ষার্থী হতাহত হওয়ার ঘটনায় উচ্চ আদালতের হস্তক্ষেপ এসেছে। এ দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে হাইকোর্ট শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও পরিচয় সংক্রান্ত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা জারি করেছে।
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি সৈয়দ জাহেদ মনসুরের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ এক আদেশে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের আইডি কার্ডে তাঁদের পিতা-মাতা বা অভিভাবকের মোবাইল নম্বর এবং রক্তের গ্রুপ সংযুক্ত করতে নির্দেশ দিয়েছেন। এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে শিক্ষা সচিবকে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
একইসঙ্গে হাইকোর্ট উত্তরার দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে একটি বিশেষজ্ঞ তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছে, যা আগামী সাত দিনের মধ্যে সরকারকে গঠন করতে বলা হয়েছে।
এছাড়া মাইলস্টোন স্কুলের দুর্ঘটনায় আহত শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা গ্রহণ, এবং নিহত শিক্ষার্থীর পরিবারকে ৫ কোটি টাকা ও আহতদের ১ কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, এই মর্মে রুল জারি করেছে আদালত। একইসঙ্গে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উন্নত অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে এবং ঢাকাসহ জনবহুল এলাকায় ত্রুটিপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ প্রশিক্ষণ ও যুদ্ধবিমান উড্ডয়ন বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।
এই রিটের শুনানিতে রিটকারীর পক্ষে ছিলেন বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, অ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল ও অ্যাডভোকেট ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শফিকুর রহমান, তানিম খান, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইকরামুল কবির ও মো. ঈসা।
এর আগে অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান রায়হান বিশ্বাস জনস্বার্থে রিটটি দায়ের করেন। রিটে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর অধীনে কতগুলো ত্রুটিপূর্ণ যুদ্ধবিমান বা প্রশিক্ষণ বিমান আছে, এবং তাদের রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তা বিষয়ক নিয়মিত কার্যক্রম কীভাবে পরিচালিত হচ্ছে, সে বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা প্রয়োজন। একই সঙ্গে দেশের জনবহুল এলাকাগুলোতে ঝুঁকিপূর্ণ বিমানচালনা বন্ধে নীতিগত সিদ্ধান্ত চেয়ে আবেদন করা হয়।
হাইকোর্টের এই নির্দেশনাগুলো একদিকে যেমন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে, অন্যদিকে ভবিষ্যতে এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সরকারকে আরও জবাবদিহিতার আওতায় আনবে বলেই আশা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা।