নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কলোড়া ইউনিয়নে ব্যতিক্রমী এক ঘটনার সাক্ষী হয়েছে স্থানীয়রা। মঙ্গলবার (২২ জুলাই) বিকেলে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি সাজ্জাদুল ইসলাম দুধ দিয়ে গোসল করে ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ ও রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। নিজ বাড়িতে স্থানীয় সাংবাদিক ও এলাকাবাসীর উপস্থিতিতে তিনি এ ঘোষণা দেন।
৪০ বছর বয়সী সাজ্জাদুল ইসলাম জানান, দীর্ঘদিন ধরে তিনি ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তবে সংগঠনের ভেতরকার স্বেচ্ছাচারিতা, অব্যবস্থাপনা ও দলীয় সুবিধাবঞ্চনার কারণে তিনি বারবার মানসিক, সামাজিক, শারীরিক ও পারিবারিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাঁর ভাষায়,
“আমি বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছি, যা আমার ভবিষ্যতের জন্য ভয়াবহ সংকেত। আমি বিশ্বাস করি, আত্মসম্মান, ব্যক্তিত্ব ও পারিবারিক দায়িত্বই একজন মানুষের প্রধান কর্তব্য। তাই আজ আমি সজ্ঞানে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি।”
তিনি বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ থেকে কোনো বাস্তব সুবিধা পাননি। বরং সরকার পতনের সময় তাঁর বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর হয় এবং তিনি শারীরিকভাবে আক্রমণের শিকার হন। এসব ঘটনায় জড়িত না থাকলেও তাঁর নামে নাশকতার মামলা হয় এবং তাঁকে কারাবরণ করতে হয়। সাজ্জাদুল অভিযোগ করেন,
“আমি যখন জেলে, তখন আমার বাবা মারা যান। এই ক্ষতি আর কোনোদিন পূরণ হবে না।”
ঘটনার দিন সাজ্জাদুল একটি গামলা ও বালতিতে দুধ এনে প্রকাশ্যে নিজের শরীরে ঢেলে গোসল করেন এবং সাংবাদিকদের সামনে আনুষ্ঠানিকভাবে ছাত্রলীগের পদ ছাড়ার ঘোষণা দেন। তিনি আরও জানান, খুব শিগগিরই লিখিত পদত্যাগপত্র জমা দেবেন।
এই ব্যতিক্রমী ঘটনার সাক্ষী হন বহু পথচারী ও স্থানীয় বাসিন্দা। তাঁদের একজন আরাফত মোল্যা বলেন,
“রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় দেখি উনি দুধ দিয়ে গোসল করছেন। পরে শুনলাম, উনি ছাত্রলীগ ছাড়ছেন। অবাক হওয়ার মতো বিষয়!”
ঘটনাটি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সাজ্জাদুলের পরিবারের সদস্যরাও। তাঁর ফুফু সোনিয়া বেগম বলেন,
“দল করেই আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। আমার ভাতিজা দুধ দিয়ে গোসল করে ভালোই করেছ। গত বছর জেলে থাকাকালীন ওর বাবার মৃত্যু আমাদের পরিবারে বড় এক ধাক্কা ছিল। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই ও রাজনীতি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
সাজ্জাদুলের এমন ঘোষণায় স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই বিষয়টিকে “প্রতীকী প্রতিবাদ” হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ কেউ এটিকে “বিক্ষুব্ধ রাজনৈতিক কর্মীর আত্মসম্মান রক্ষার প্রয়াস” বলেও ব্যাখ্যা করছেন।