১৫ বছর আগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপির বর্ষীয়ান নেতা প্রয়াত আহসান হাবিব কামালের বিরুদ্ধে দেওয়া সাজা ও অর্থদণ্ড বাতিল করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে মামলার অপর চার আসামির ক্ষেত্রেও একই আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বুধবার (২৩ জুলাই) বিচারপতি মো. সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন। রায়ে বলা হয়, রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগে কোনো ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায়নি।
আহসান হাবিব কামালের পক্ষে আইনজীবী ব্যারিস্টার সানজিদ সিদ্দিকী জানান, হাইকোর্ট মামলার সব আসামিকে নির্দোষ ঘোষণা করেছেন। রায় ঘোষণার পরপরই তারা নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন। তিনি আরও দাবি করেন, এই মামলার পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল এবং কামালের বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা এক্ষেত্রে একটি বড় ভূমিকা পালন করেছে।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ১৯৯৫-৯৬ অর্থবছরে বরিশাল শহরে টেলিফোন অ্যান্ড টেলিগ্রাফ (টিঅ্যান্ডটি) বিভাগের ভূ-গর্ভস্থ ক্যাবল স্থাপন করা হয়। এতে সড়কের ক্ষতি হওয়ায় তা মেরামতের জন্য তৎকালীন পৌরসভাকে ৪৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় সংশ্লিষ্ট দপ্তর। তবে কোনো দরপত্র আহ্বান না করেই ‘হাই ইয়ং’ নামের একটি কথিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে চারটি চেকের মাধ্যমে ৩৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। তদন্তে প্রতিষ্ঠানটির অস্তিত্বই পাওয়া যায়নি।
এই ঘটনায় ২০১০ সালের ১১ অক্টোবর বরিশালের দুদকের কর্মকর্তা আব্দুল বাসেত মামলাটি করেন। পরবর্তী বছর, ২০১১ সালের ১৯ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। ২০২০ সালের ৯ নভেম্বর বরিশালের বিশেষ জজ আদালত মামলার রায়ে আহসান হাবিব কামালসহ পাঁচজনকে ৭ বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং প্রত্যেককে ১ কোটি টাকা করে অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করেন।
সাজা ঘোষণার পর কামাল ৭ মাস ৮ দিন কারাভোগ করেন। এরপর ২০২১ সালের ১৬ জুলাই ৫০ লাখ টাকা জরিমানা পরিশোধ করে তিনি জামিনে মুক্তি পান। পরে ২০২২ সালের ৩১ জুলাই ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
উল্লেখ্য, আহসান হাবিব কামাল একাধারে বরিশাল জেলা ও মহানগর বিএনপির সভাপতি ছিলেন। ১৯৯৫ সাল থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত তিনি পৌর চেয়ারম্যান ও সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত হওয়ার পর ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন। পরে ২০১৩ সালে বিএনপির সমর্থনে তিনি বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন।