Top Header
Author BartaLive.com
তারিখ: ২৪ জুলাই ২০২৫, ০৪:১৫ অপরাহ্ণ

থাইল্যান্ড-কাম্বোডিয়ার রক্তাক্ত সংঘর্ষ: বন্ধুত্ব ভুলে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত সীমান্ত

News Image

দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্র থাইল্যান্ড ও কাম্বোডিয়ার মধ্যে কয়েক দশকের পুরোনো সীমান্ত বিরোধ ফের ভয়াবহ সংঘর্ষে রূপ নিয়েছে। সাম্প্রতিক এই সংঘাতে অন্তত ১২ জন বেসামরিক নাগরিক ও সেনা সদস্য নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো। সংঘর্ষের কেন্দ্রবিন্দু—প্রাচীন এক হিন্দু মন্দির এবং এর আশপাশের অঞ্চল, যেটি দুই দেশই নিজেদের দাবি করে আসছে।

গত বছরই দুই দেশের মধ্যে ‘বন্ধুত্বের সেতু’ হিসেবে পরিচিত থাই-কাম্বোডিয়া ফ্রেন্ডশিপ ব্রিজের পাশে একটি স্থায়ী সীমান্ত চেকপোস্ট খোলা হয়। এতে ধারণা করা হয়েছিল, দীর্ঘদিনের উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত হয়েছে। কিন্তু এক বছর না যেতেই সেই সীমান্ত অঞ্চল পরিণত হয়েছে যুদ্ধক্ষেত্রে।

শতবর্ষ পুরোনো বিরোধ

এই সীমান্ত বিরোধের ইতিহাস এক শতাব্দীরও বেশি পুরোনো। মূল বিরোধের কেন্দ্র হলো প্রেহা ভিহেয়ার নামের ১,০০০ বছরের পুরোনো একটি হিন্দু মন্দির, যেটি ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। থাইল্যান্ড ও কাম্বোডিয়া উভয় দেশই এই ঐতিহাসিক স্থাপনাটিকে নিজেদের বলে দাবি করে। আন্তর্জাতিক আদালতের রায় কাম্বোডিয়ার পক্ষে গেলেও থাইল্যান্ড বরাবরই তার প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে।

সাম্প্রতিক উত্তেজনা কীভাবে শুরু হলো?

২০২৫ সালের মে মাসে সীমান্তের এমেরাল্ড ট্রায়াঙ্গল নামক একটি বিতর্কিত এলাকায় একটি ছোট আকারের সংঘর্ষে এক কাম্বোডীয় সেনা নিহত হন। এই ঘটনার পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। এরপর থেকেই শুরু হয় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, একে অপরকে আক্রমণের জন্য দায়ী করা হয়।

রকেট হামলা, যুদ্ধবিমান—মাঠে সবই

সাম্প্রতিক সংঘর্ষে কাম্বোডীয় সেনারা প্রেহা ভিহেয়ার প্রদেশে রুশ নির্মিত BM-21 মাল্টিপল রকেট লাঞ্চার মোতায়েন করে। অন্যদিকে থাইল্যান্ড আকাশপথে শক্তি প্রদর্শন করে F-16 যুদ্ধবিমান পাঠিয়ে। এই সংঘর্ষে উভয় পক্ষেই বেসামরিক হতাহতের খবর পাওয়া গেছে।

হুন সেনের হুঁশিয়ারি

যদিও ২০২৩ সালে হুন সেন প্রধানমন্ত্রী পদ ছেড়ে দেন তাঁর ছেলে হুন মানেতকে, তথাপি তিনি এখনও বাস্তব ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু। এই পরিস্থিতিতে তিনি প্রকাশ্যে যুদ্ধের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন এবং থাইল্যান্ডকে ‘সীমা লঙ্ঘনের’ জন্য দায়ী করেছেন।

বন্ধুত্ব ভেঙে যুদ্ধ

একসময় ‘ভালোবাসা-ঘৃণার’ সম্পর্ক হিসেবে পরিচিত এই দুই দেশের মধ্যে সাম্প্রতিক সহিংসতা পুরো অঞ্চলকে উদ্বেগে ফেলে দিয়েছে। আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তার স্বার্থে এখন আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি এই দুই দেশের ওপর।

এখন দেখার বিষয়—এই পুরোনো বিরোধ কী সমাধানের পথে যাবে, নাকি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া আরও একটি দীর্ঘমেয়াদি সংঘাতের মুখে পড়বে।

Watermark