গত জুনে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবি ঘোষণা দেন, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা আর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির অগ্রাধিকার নয়। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও পূর্বে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন। তিনি গত ফেব্রুয়ারিতে গাজা উপত্যকা যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার একটি প্রস্তাব দেন, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা, আরব দেশ, ফিলিস্তিন এবং জাতিসংঘের পক্ষ থেকে ‘জাতিগত নির্মূলের প্রস্তাব’ বলে কড়া ভাষায় নিন্দিত হয়।
এই প্রেক্ষাপটে, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ কয়েক মাস ধরে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় রাখছিলেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল—দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান ধারণাটিকে টিকিয়ে রাখা, যদিও এ নিয়ে পশ্চিমা মিত্রদের ভেতরে বিরূপ প্রতিক্রিয়াও ছিল।
মূলত, ফ্রান্স ও সৌদি আরব মিলে জুনে জাতিসংঘে একটি উচ্চপর্যায়ের সম্মেলন আয়োজনের পরিকল্পনা করেছিল, যেখানে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের একটি রোডম্যাপ উপস্থাপন করা হতো, পাশাপাশি ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেওয়া হতো। কিন্তু ১২ দিনব্যাপী ইসরায়েল-ইরান আকাশযুদ্ধ শুরু হলে সম্মেলনটি পিছিয়ে দেওয়া হয়। আঞ্চলিক আকাশসীমা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেক আরব দেশের প্রতিনিধিদের যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। পরে যুক্তরাষ্ট্রের চাপেও সম্মেলনটি পিছিয়ে নেওয়া হয়।
নতুন করে ২৮ ও ২৯ জুলাই সম্মেলনটি মন্ত্রী পর্যায়ে সীমিত রাখা হয়েছে। আর আগামী সেপ্টেম্বরের জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের সময় রাষ্ট্রপ্রধানদের অংশগ্রহণে আরেকটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের পরিকল্পনা রয়েছে।
এই সম্মেলনের আগে ফ্রান্সের পক্ষ থেকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র স্বীকৃতির ঘোষণা আসার উদ্দেশ্য হলো—জাতিসংঘে অন্যান্য দেশদের সঙ্গে সমন্বয় গড়ে তোলা, যারা হয়ত ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে আগ্রহী বা এখনো সিদ্ধান্তহীন।
তবে ফ্রান্সের এই অবস্থান পশ্চিমা মিত্রদের মধ্যে—বিশেষ করে ব্রিটেন ও কানাডার—প্রতিরোধের মুখে পড়েছে। এমন অবস্থায় নিউইয়র্কে আসন্ন সম্মেলনে প্রায় ৪০ জন পররাষ্ট্রমন্ত্রী উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
ইসরায়েল গত কয়েক মাস ধরে প্যারিসকে এই স্বীকৃতি থেকে বিরত রাখতে কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলের একাধিক সূত্র বলছে, তারা ফ্রান্সকে হুঁশিয়ার করেছে—যদি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র স্বীকৃতি দেওয়া হয়, তাহলে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় কমিয়ে দেওয়া হতে পারে, প্যারিসের মধ্যপ্রাচ্য উদ্যোগগুলো ব্যাহত করা হবে, এমনকি পশ্চিম তীরের কিছু অংশ দখল করে নেওয়ার ইঙ্গিতও দেওয়া হয়েছে।
গত অক্টোবরে হামাসের হামলার পর থেকে গাজায় ভয়াবহ যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। তাদের দাবি, এই মুহূর্তে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া মানে হবে—হামাসকে পুরস্কৃত করা।
এই প্রেক্ষাপটে ফ্রান্সকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের ভাইস প্রেসিডেন্ট হুসেইন আল শেখ। এক্স-এ দেওয়া বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, “ম্যাক্রোঁর সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি ফ্রান্সের প্রতিশ্রুতি এবং ফিলিস্তিনি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণ ও স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের অধিকারের প্রতি সমর্থনের প্রকাশ।”