সম্প্রতি কক্সবাজারের মহেশখালীতে নারী ফুটবলার পারভিন সুলতানাকে ঘিরে একটি বিভ্রান্তিকর খবর ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। দাবি করা হচ্ছে, উগ্র ইসলামপন্থীরা ‘নারীদের ফুটবল খেলা হারাম’ ঘোষণা করে পারভিনের ওপর হামলা চালিয়েছে এবং তার পায়ের রগ কেটে দিয়েছে। এ ঘটনার সূত্র ধরে দেশের কিছু গণমাধ্যম ও আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম দাবি করছে, বাংলাদেশে ধর্মীয় উগ্রবাদের উত্থান ঘটছে এবং অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের শাসনামলে এমন ঘটনা ঘটেছে।
তবে প্রকৃত অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এই দাবি সম্পূর্ণ ভুয়া এবং বিভ্রান্তিকর। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এ ধরনের গুজবের সত্যতা অস্বীকার করেছে।
মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঞ্জুরুল হক এবং স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঘটনাটির সঙ্গে ধর্মীয় উগ্রবাদের কোনো সম্পর্ক নেই। ১৪ এপ্রিল এলাকার একটি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয়ভাবে উত্তেজনা তৈরি হয় এবং বিএনপি-সমর্থক আব্দুর রশিদ (৫০) নামে এক ব্যক্তি নিহত হন।
ঘটনার পেছনে স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা অমিত হাসানের সঙ্গে নিহত রশিদের রাজনৈতিক উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় এবং সংঘর্ষ ছিল মূল কারণ। পুলিশ জানায়, আব্দুর রশিদের পরিবারের করা মামলার ভিত্তিতে পারভিনের দুই ভাই কামরুল হাসান (রোমা) ও হেলাল উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে পারভিন এবং তার আরেক ভাই পলাতক।
ওসি মঞ্জুরুল হক বলেন, পারভিনের বাড়িতে স্থানীয় কিছু লোকজন হামলা চালালেও সেটি কোনো ধর্মীয় উগ্র হামলা ছিল না। হামলার ঘটনায় পারভিনের পরিবার আদালতে যে মামলা করেছে, তাতে কেবল ভাঙচুরের কথা উল্লেখ আছে—পায়ের রগ কাটার কোনো অভিযোগ বা প্রমাণ নেই। স্থানীয় সাংবাদিকরাও বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, পারভিনের রগ কাটার অভিযোগ ভিত্তিহীন। ধারণা করা হচ্ছে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে এই ধরনের গুজব ছড়ানো হচ্ছে।
সার্বিকভাবে, পারভিন সুলতানার ওপর হামলা বা রগ কাটার অভিযোগ, এবং সেটিকে নারী ফুটবল খেলার সঙ্গে যুক্ত করে উগ্রপন্থার রঙ দেওয়ার প্রচেষ্টা—সবই একটি উদ্দেশ্যমূলক গুজব ছড়ানোর অংশ। তদন্ত ও স্থানীয় সূত্রের ভিত্তিতে এই দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।