অন্তর্বর্তী সরকারের আচরণ জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) ঘিরে পক্ষপাতদুষ্ট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত—এমন অভিযোগ তুলেছেন গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি এবং ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক। শুক্রবার বিকেলে কুমিল্লা টাউন হল মাঠে অনুষ্ঠিত এক সমাবেশ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এই মন্তব্য করেন।
নুরুল হক বলেন, সদ্য গঠিত এনসিপিকে সরকার যেভাবে প্রকাশ্য পৃষ্ঠপোষকতা করছে, তা জনগণের চোখে সরকারের নিরপেক্ষতার প্রশ্ন তুলেছে। তার ভাষায়, “দেশের সচেতন রাজনৈতিক মহল মনে করে, সরকার একটি দলকে পৃষ্ঠপোষকতা করে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করছে। কিছুদিন আগে ১৩টি রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে আমরাও ছিলাম। সেখানেও সবাই এনসিপির প্রতি সরকারের পক্ষপাতিত্বের কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে। অধ্যাপক ইউনূস স্যারের প্রতি সম্মান রেখেই নেতারা জানিয়েছেন—এটা তাঁদের কাছ থেকে প্রত্যাশিত নয়।”
তিনি আরও বলেন, “এই দেশে এর আগেও সরকারের ছত্রছায়ায় অনেক ‘কিংস পার্টি’ গড়ে উঠেছিল, যারা সময়ের সঙ্গে বিলীন হয়ে গেছে। এখন আবার নতুন করে একটি অনিবন্ধিত দলকে নিয়ে সরকার অতিমাত্রায় আগ্রহ দেখাচ্ছে, যা সন্দেহজনক।”
সরকারের দ্বৈত নীতি তুলে ধরে নুরুল হক বলেন, “একদিকে বিরোধী দলগুলোর সমাবেশে বাধা দেওয়া হচ্ছে, অন্যদিকে এনসিপির মতো নতুন দলকে প্রশাসনিক সুবিধা দিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে। কোথাও কোথাও তো বৃক্ষমেলা ও পরীক্ষাও বন্ধ করে দিয়ে শিক্ষার্থীদের সমাবেশে আনার খবর পাওয়া গেছে। এই আচরণ নতুন বাংলাদেশের চিত্র হতে পারে না।”
মাইলস্টোন স্কুল দুর্ঘটনা ঘিরে সরকারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। বলেন, “মাইলস্টোনের ঘটনার পর সরকারের প্রশাসনিক দুর্বলতা স্পষ্ট হয়ে গেছে। কিছু ষড়যন্ত্রকারী গোষ্ঠী শিক্ষার্থীদের উত্তেজিত করে সচিবালয়ে নিয়ে যায়, ভাঙচুর করে। সরকার যদি সচিবালয়ের মতো সুরক্ষিত জায়গায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারে, তাহলে ১৮ কোটি মানুষের নিরাপত্তা কোথায়?”
সমাবেশে ‘গণঅভ্যুত্থানের জনআকাঙ্ক্ষা ও রাষ্ট্র সংস্কার’ স্লোগান সামনে রেখে কুমিল্লার ছয়টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে গণ অধিকার পরিষদ। কুমিল্লা-২ আসনে নাজমুল হাসান, কুমিল্লা-৫ এ মোকাম্মেল হোসেন, কুমিল্লা-৬ এ রাশেদুল হক রিয়াদ, কুমিল্লা-৭ এ গিয়াস উদ্দিন, কুমিল্লা-৮ এ ফয়েজ উল্লাহ এবং কুমিল্লা-৯ আসনে প্রার্থী করা হয় আবদুল্লাহকে। নুরুল হক জানান, “সারা দেশে ৩০০ আসনেই ট্রাক প্রতীকে আমরা নির্বাচনে অংশ নেব। ঢাকায় ৩৬টি আসনে এবং কুমিল্লার এই সমাবেশে প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে আমাদের নির্বাচনী যাত্রা শুরু হলো।”
কুমিল্লা জেলা গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি মো. ফয়েজ উল্লাহর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মো. গিয়াস উদ্দিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি মঞ্জুর মোর্শেদ, কেন্দ্রীয় নেতা রাশেদ খানসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য দেন।