চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত দেশের প্রথম সুড়ঙ্গপথ বা টানেল দিয়ে প্রত্যাশার তুলনায় মাত্র সাড়ে ১৮ শতাংশ যানবাহন চলাচল করছে। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী যেখানে ২১ মাসে চলার কথা ছিল ১ কোটি ৩১ লাখের বেশি গাড়ি, সেখানে চলেছে মাত্র ২৪ লাখ ২৮ হাজার। এতে করে টানেল থেকে দৈনিক আয় গড়ে ১০ লাখ ৭৪ হাজার টাকা হলেও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় প্রায় ৩৭ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। ফলে প্রতিদিন গড়ে ২৭ লাখ ৪৬ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে সরকারকে।
২০২৩ সালের ২৯ অক্টোবর উদ্বোধনের পর চলতি বছরের ১৯ জুলাই পর্যন্ত এই টানেল দিয়ে মোট ২৪ লাখের কিছু বেশি গাড়ি চলাচল করেছে। অথচ চালুর আগেই প্রকল্প সমীক্ষায় বলা হয়েছিল, টানেল দিয়ে দৈনিক ১৮ থেকে ২০ হাজার গাড়ি চলবে। কিন্তু বাস্তবে একদিনও এই সংখ্যক গাড়ি চলেনি।
সেতু কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত টানেল থেকে মোট টোল আদায় হয়েছে ৬৭ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। অথচ পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ ব্যয় হয়েছে ২৫৯ কোটি টাকারও বেশি। এতে করে ২১ মাসে মোট লোকসান দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৯২ কোটি টাকা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টানেলের আশপাশের অঞ্চল এখনো অর্থনৈতিকভাবে সচল হয়নি বলেই ব্যবহার কম। কক্সবাজারের মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর এবং আনোয়ারা অঞ্চলের শিল্পাঞ্চল পুরোপুরি চালু হলে এই পরিস্থিতি পরিবর্তন হতে পারে।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সম্প্রতি চট্টগ্রামে এক সভায় বলেন, টানেল চালু হলেও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়ই উঠছে না। তিনি মনে করেন, এমন বড় প্রকল্প নেওয়ার আগে আরও বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা করা উচিত ছিল।
সেতু কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে টানেল দিয়ে সবচেয়ে বেশি চলাচল করছে হালকা যানবাহন—যেমন প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, পিকআপ ইত্যাদি। এই সংখ্যা ১৭ লাখ ৭৭ হাজার, যা মোট গাড়ির প্রায় ৭৩ শতাংশ।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ মইনুল ইসলাম বলেন, টানেল ব্যবহারের পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হলে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ নির্মাণ এবং শিল্পায়ন, আবাসন ও পর্যটন কাঠামো গড়ে তুলতে হবে।
প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৬ হাজার ৭০ কোটি টাকার ঋণ এসেছে চীনের এক্সিম ব্যাংক থেকে। সেতু কর্তৃপক্ষ বলছে, চলতি অর্থবছরে টানেল থেকে আয় হবে আনুমানিক ৩৯ কোটি টাকা, বিপরীতে ব্যয় হবে ২০৮ কোটি টাকা।