বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক আন্দোলনের মূল নায়ক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান—এ মন্তব্য করেছেন দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। শনিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের জিইসি কনভেনশন হলে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ, চট্টগ্রাম শাখা আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
আমীর খসরু বলেন, জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠন—যুবদল, ছাত্রদল, শ্রমিক দল, স্বেচ্ছাসেবক দল—সবাই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছেন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, “এই আন্দোলনকে কেবল বিএনপির কৃতিত্ব হিসেবে আমরা দেখাতে চাই না। এটি পুরো দেশের মানুষের আন্দোলন।”
তিনি আরও যোগ করেন, “তারেক রহমান নিজেও বলেননি যে এটি শুধু বিএনপির আন্দোলন। কারণ, আমরা আন্দোলনের কৃতিত্ব নিয়ে বিভাজনে যেতে চাই না। এটি বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের সম্মিলিত প্রতিরোধ।”
গত ১৬ বছর ধরে বিএনপির নেতাকর্মীরা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন উল্লেখ করে আমীর খসরু বলেন, “তারা ঘরে থাকতে পারেননি, ব্যবসা করতে পারেননি, পরিবারের ভবিষ্যৎ ধ্বংস হয়ে গেছে। তাই জুলাই-আগস্টের আন্দোলন আমাদের জন্য ঐতিহাসিক। এটি দীর্ঘ সংগ্রামের পরিণতি, যা আমাদের স্মরণে থাকবে। তবে অতীতের ত্যাগ ও নিপীড়নের শিকার যাঁরা হয়েছেন, তাঁদের অবদানও স্মরণে রাখতে হবে।”
বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের কথাও বলেন বিএনপির এই শীর্ষ নেতা। তিনি বলেন, “তারেক রহমান আজ সহনশীলতার কথা বলছেন। ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রাজনীতি করতে হবে। কারণ, রাজনৈতিক সংস্কৃতি না বদলালে সংস্কার করেও ভবিষ্যৎ পরিবর্তন সম্ভব নয়।”
সমাবেশের প্রধান বক্তা, বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, “যাঁরা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও তারেক রহমানের নেতৃত্ব নিয়ে সমালোচনা করেন, তাঁরা আয়নায় নিজেদের চেহারা দেখে জনগণের কাছে নিজেদের অবস্থান বুঝে নিন।” তিনি বলেন, বিএনপি ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে জনগণের সামনে যাচ্ছে, সমালোচক রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজ নিজ কর্মসূচি নিয়েও জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর আহ্বান জানান।
সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ও সিটি মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, “৩৬ দিনে সরকারের পতন হয়েছে এমন দাবি শোনা গেলেও, বাস্তবে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা ১৬ বছর ধরে রক্ত দিয়ে আন্দোলন চালিয়ে গেছেন।” তিনি জানান, চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ওয়াসিম আকরাম গত বছরের ১৬ জুলাই আন্দোলনের মিছিলে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন। তিনি বলেন, “আমাকে মুরাদপুর থেকে ছবি পাঠানোর ১০ মিনিট পরই খবর পাই ওয়াসিম গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। ওয়াসিমই আসলে প্রথম শহীদ, যদিও আমরা তা বলে বেড়াই না।”
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ, চট্টগ্রাম শাখার আহ্বায়ক জাহিদুল করিম।