গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, বর্তমান রাজনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের জন্য বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন—এই তিনটি প্রক্রিয়ার বিকল্প নেই। তিনি বলেন, “পতিত ফ্যাসিস্ট শক্তির ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে এবং জনগণের গণ–অভ্যুত্থান রক্ষা করতে হলে এই তিন ক্ষেত্রেই ন্যূনতম ঐকমত্য বজায় রেখে একটি কার্যকর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সূচনা করতে হবে।”
শনিবার বিকেলে গাজীপুরের টঙ্গীর মিলগেট এলাকায় নোয়াখালী সমিতি মিলনায়তনে আয়োজিত ‘জুলাই সমাবেশ ও শহীদ স্মরণ’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এই সমাবেশের আয়োজন করে গণসংহতি আন্দোলন, গাজীপুর জেলা শাখা।
জোনায়েদ সাকি বলেন, “নির্বাচন হলো রাষ্ট্র পরিচালনায় জনগণকে যুক্ত করার একটি গণতান্ত্রিক উপায়। রাষ্ট্রকে জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক করতে চাইলে নির্বাচন প্রয়োজন, আর সেই নির্বাচনের মাধ্যমেই সংস্কার বাস্তবায়ন সম্ভব।”
তিনি বলেন, “আমরা শুরু থেকেই বলে আসছি, একটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম ও প্রধান কাজ হওয়া উচিত শহীদদের মর্যাদা প্রদান, আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত করা এবং শহীদ পরিবার ও আহতদের জীবনের দায়িত্ব নেওয়া। দুঃখের বিষয় হলো, এক বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো শহীদদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা হয়নি। সরকার এখনো জানাতে পারেনি, তাদের কীভাবে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়া হবে। আমরা নিয়মিতভাবে শহীদ পরিবার ও আহতদের কাছ থেকে অভিযোগ পাচ্ছি। সরকার এই দায়িত্ব পালনে যেভাবে গড়িমসি করছে, তা জনগণ ভালোভাবে নিচ্ছে না। আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, দ্রুততম সময়ে এসব দায়িত্ব পালন করুন ও বাস্তবায়নে এগিয়ে যান।”
রাজনৈতিক কাঠামো পরিবর্তনের পাশাপাশি অর্থনীতিতে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথাও তুলে ধরেন জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, “আমরা ভোট দিয়ে যাকে নির্বাচিত করি, সে যদি জনগণের ওপর ছড়ি ঘোরায়, তাহলে সেখানে ফ্যাসিবাদের জন্ম হয়। কিন্তু একজন নির্বাচিত প্রতিনিধি যদি জনগণের কাছে জবাবদিহি করে, তবেই গণতন্ত্রের উপস্থিতি নিশ্চিত হয়।”
তিনি আরও বলেন, “শুধু রাষ্ট্রীয় কাঠামো সংস্কার করলে হবে না, অর্থনীতিতেও পরিবর্তন আনতে হবে। দেশে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা লুটপাটভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বদলে গড়ে তুলতে হবে একটি উৎপাদনমুখী, জনকল্যাণমূলক অর্থনীতি। যেখানে প্রতিটি মানুষের জন্য কর্মসংস্থান নিশ্চিত হবে এবং যারা জাতীয় সম্পদ তৈরি করেন, সেই শ্রমজীবী জনগণ সম্পদের বণ্টনে ন্যায্য অংশীদার হবেন।”
সাকি বলেন, “আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এমন একটি সমাজ গড়তে হবে, যেখানে প্রতিটি শিশু শিক্ষা পাবে, দক্ষতা অর্জন করবে এবং মানবিক হয়ে উঠবে। এই লক্ষ্যেই আমাদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংস্কার করতে হবে।”