ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক এবং ব্যাটিং স্তম্ভ জো রুট এখন টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। তবে এই অর্জনের পেছনে যে একজন কিংবদন্তি প্রভাব রেখেছেন, সেটি অকপটে স্বীকার করেছেন রুট। তিনি বলেন, “শচীন টেন্ডুলকারের মতো হতে চেয়েই আমি বড় হয়েছি।”
রুটের ভাষায়, “শচীন যখন টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক করেন, তখন আমি জন্মই নেইনি। তিনি ক্রিকেটের এক জীবন্ত প্রতীক ছিলেন। তাঁর মতো হয়ে ওঠাই ছিল আমার শৈশবের স্বপ্ন। ২০১২ সালে ভারতের বিপক্ষে আমার অভিষেক সিরিজে তাঁর বিপক্ষে খেলতে পারাটা আমার জীবনের অন্যতম স্মরণীয় মুহূর্ত। সেই সিরিজে তাঁর সঙ্গে একই মাঠে থাকার অভিজ্ঞতা আমি কোনো দিন ভুলব না।”
রুটের আন্তর্জাতিক টেস্ট যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০১২ সালে ভারতের নাগপুরে, আর সেই সিরিজই ছিল শচীনের ক্যারিয়ারের শেষ দিকের অধ্যায়। এক দশকেরও বেশি সময় পরে, রুটের রান সংখ্যা এখন ১৫৭ টেস্টে ১৩,৪০৯, যা তাঁকে নিয়ে গেছে রাহুল দ্রাবিড়, জ্যাক ক্যালিস ও রিকি পন্টিংয়ের উপরে। শচীন টেন্ডুলকার এখনও টেস্ট ইতিহাসের শীর্ষস্থানীয় রান সংগ্রাহক, যার রান সংখ্যা ২০০ টেস্টে ১৫,৯২১।
তাঁকে যখন জিজ্ঞেস করা হয়, তিনি কি শচীনের রেকর্ড ভাঙার দিকে লক্ষ্য রাখছেন? জো রুট বিনয়ের সঙ্গে বলেন, “না, এ ধরনের রেকর্ড আমার মূল লক্ষ্য নয়। আমি ম্যাচ জিততে চাই, দলকে জেতাতে চাই। আমরা যদি প্রথম ইনিংসে ব্যাট করি, তাহলে বড় রান করে ম্যাচ সেট আপ করা—আর দ্বিতীয় ইনিংসে হলে রান তাড়া করে জয় এনে দেওয়া—এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এসব রেকর্ড আপনাআপনি হয়ে যাবে, যদি সঠিকভাবে খেলি।”
সম্প্রতি ম্যানচেস্টার টেস্টে রুট যখন ১২০ রান স্পর্শ করেন, তখন তিনি পন্টিংয়ের ১৩,৩৭৮ রানের রেকর্ড পেরিয়ে যান। এর আগেই তিনি দ্রাবিড় ও ক্যালিসকে অতিক্রম করেন। রুট বলেন, “আজ সকালে রিকি পন্টিংকে দেখেছি। তিনি এমন একজন যাকে আমি ছোটবেলায় অনেক দেখতাম, অনুসরণ করতাম। ওনার ফেমাস পুল শটটা আমি বাসার বাগানে কিংবা আমার ক্লাবে অনুকরণ করতাম। আজ এমন জায়গায় পৌঁছেছি যে তাঁরা যাঁরা কিংবদন্তি, তাঁদের সঙ্গে আমাকে একসঙ্গে উচ্চারণ করা হচ্ছে—এটা আমার কাছে দারুণ আনন্দের বিষয়।”
ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের গ্যালারিতে দাঁড়িয়ে হাজারো দর্শক রুটের মাইলফলক উদযাপন করেন। তবে রুট নিজে ছিলেন শান্ত ও মনোযোগী। তিনি বলেন, “দারুণ একটি দিন ছিল ব্যাটিংয়ের জন্য। সারা গ্যালারির দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানানোর মুহূর্তটি অবশ্যই বিশেষ অনুভূতি ছিল। কিন্তু এ রকম মুহূর্তেও মনে রাখতে হয়—এখনও কাজ বাকি, এখনও ম্যাচ জিততে হবে। বড় সিরিজে এমন সময় ম্যাচ গড়ার কাজটা গুরুত্বপূর্ণ। এটাই আমাদের আসল লক্ষ্য হওয়া উচিত।”
তিনি আরও বলেন, “জনগণের ভালোবাসা ও প্রশংসা অবশ্যই আবেগ জাগানিয়া, তবে সব সময় সামনে আরও বড় চ্যালেঞ্জ থাকে—আর সেটাই মাথায় রাখতে হয়।”