“সমন্বয়কারীদের চাঁদা দাবির খবরে আমি বেদনায় নীল হয়ে গিয়েছি। গণঅভ্যুত্থানের মাত্র এক বছর পেরোতে না পেরোতেই এমন খবর আসছে! যে তরুণরা দেশ গড়বে বলে আমরা আশাবাদী ছিলাম, আজ তারাই চাঁদাবাজির অভিযোগে অভিযুক্ত। আমরা কি এমন একটি পরিণতির জন্য লড়াই করেছিলাম?”
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন সোমবার (২৮ জুলাই) দুপুরে, শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে যুবদল আয়োজিত গ্রাফিতি আর্টসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে।
তিনি বলেন, “এত দ্রুত যদি এমন অবক্ষয় দেখা দেয়, তবে ভবিষ্যতের পথ কেমন হবে? গোটা জাতি এখন তরুণদের দিকে তাকিয়ে আছে—হাসিনা পতনের পর এই প্রজন্মই দেশ গড়বে বলে আশাবাদী সবাই। কিন্তু আজ দুঃখ হয়, জোর গলায় বলতে পারছি না, দেশ নতুন করে গড়ে উঠবে। এরকম পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে, যাতে আবার ফ্যাসিস্টদের উত্থানের সুযোগ হয়।”
বিএনপির সংস্কার ইস্যুতে সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতা করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা সংস্কারে সহযোগিতা করে যাচ্ছি, কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। বিএনপিকে কোণঠাসা করতে যতই চাপ আসুক, দেশের মানুষ জানে কিভাবে লড়াই করে মুক্ত হতে হয়। তারেক রহমান সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন কিভাবে বাংলাদেশকে নতুনভাবে গড়ে তোলা যায়।”
মির্জা ফখরুল স্মরণ করিয়ে দেন, “একটি নির্দিষ্ট দল বা ছাত্রসংগঠন একা এই আন্দোলন করেনি। জুলাই অভ্যুত্থানে রিকশাচালক, ভ্যানচালক, শ্রমিক, কৃষক, শিশু-বৃদ্ধ—সবার অংশগ্রহণ ছিল। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় স্বৈরাচারকে বিদায় দেওয়া সম্ভব হয়েছে। সত্যিকারের পরিবর্তন আনতে হলে, সেই জনগণেরই মতামতকে প্রাধান্য দিতে হবে।”
তরুণ প্রজন্মের প্রতি আবারও আস্থা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “পুরো দেশ এখন তরুণদের দিকে তাকিয়ে আছে। তাদের হাত ধরেই নতুন সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে।”
হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে বিচার না হওয়া নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন ফখরুল। বলেন, “এক বছর পার হয়ে গেল, কিন্তু হাসিনার বিচার কিছুই দেখলাম না। যেসব হত্যাকাণ্ড সবাই দেখেছে, প্রকাশ্যে ঘটেছে—সেই খুনিদের কেন গ্রেপ্তার করা হলো না? কেন বিচার হয়নি?”
তিনি আরও বলেন, “২০২৪ সালের জুলাইয়ে আমাদের দলের বহু নেতাকর্মী গুম, গ্রেপ্তার ও হত্যার শিকার হয়েছেন। ডিবি হেফাজতে নির্যাতন করা হয়েছে। শুধু যুবদলের শহীদ হয়েছেন ৭৯ জন, ছাত্রদলের ১৪২ জন। যার যে অবদান, তা তাকে দিতে হবে। ইতিহাসকে বিকৃত করা যাবে না—সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলার সাহস থাকতে হবে।”
শেষে তিনি বলেন, “গত ১৫ বছর ধরে ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিরুদ্ধে আমাদের নেতাকর্মীরা জীবন বাজি রেখে লড়াই করেছে। অথচ আজ, তার পতনের এক বছর পরেও, তিনি এবং তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা বিচারহীন থেকে যাচ্ছে—এটাই দেশের সবচেয়ে বড় লজ্জা।”