Top Header
Author BartaLive.com
তারিখ: ২৯ জুলাই ২০২৫, ০৭:০৯ অপরাহ্ণ

জুলাই সনদের খসড়াকে ‘অসম্পূর্ণ ও বিপজ্জনক’ বলছে জামায়াতে ইসলামী

News Image

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় অংশ নিয়ে জামায়াতে ইসলামী জুলাই সনদের খসড়াকে ‘অসম্পূর্ণ’ এবং প্রস্তাবিত বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকে ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে অভিহিত করেছে। দলটি বলছে, নির্বাচিত সরকারকে দুই বছরের মধ্যে এই সনদ বাস্তবায়নের চাপ প্রয়োগ করা হলে দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে।

মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের সংলাপে অংশ নিয়ে জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের এই মন্তব্য করেন।

তাহের বলেন, “এই খসড়াটি অসম্পূর্ণ এবং কিছু অংশ বিপজ্জনক। যদি এটি শুধুমাত্র একটি খসড়া বা নমুনা হয়, তাহলে মন্তব্যের প্রয়োজন নেই। কিন্তু যদি এটিই মূল পরিকল্পনা হয়, তাহলে একে গ্রহণ করা যাবে না।” তিনি আরও জানান, জামায়াতে ইসলামী নিজস্ব একটি সনদের খসড়া প্রস্তুত করছে, যা শিগগিরই কমিশনে জমা দেওয়া হবে।

তিনি সংলাপে একটি কার্যকর ও আইনি কাঠামোর প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন। তাহেরের প্রস্তাব অনুযায়ী, সনদের বৈধতা দিতে দুটি পথ গ্রহণযোগ্য হতে পারে—এক, অধ্যাদেশের মাধ্যমে একটি আইনি কাঠামো গঠন, পরে নির্বাচিত সংসদে তা অনুমোদন; দুই, গণভোটের মাধ্যমে জনগণের চূড়ান্ত মতামত গ্রহণ।

তাহের বলেন, “আমরা চাই ঐকমত্য কার্যকর এবং আইনি কাঠামোর মধ্যে হোক। অন্যথায় রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।”

সংলাপে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গঠনপ্রক্রিয়া নিয়েও বিস্তৃত আলোচনা হয়েছে বলে জানান জামায়াতের এই নেতা। তিনি বলেন, অধিকাংশ রাজনৈতিক দল একমত যে আগামী জাতীয় নির্বাচন কেয়ারটেকার সরকারের অধীনেই হতে হবে। শুধু বিএনপি কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়েছে।

তাহের জানান, প্রস্তাবিত কাঠামো অনুযায়ী একটি পাঁচ সদস্যের বাছাই কমিটি থাকবে—প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার (বিরোধী দলের) এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দলের একজন প্রতিনিধি। এই কমিটি ১২ জন সম্ভাব্য প্রার্থীর মধ্য থেকে কেয়ারটেকার সরকারের প্রধান নির্বাচন করবে।

যদি ঐকমত্যে পৌঁছানো না যায়, তাহলে প্রথমে সর্বসম্মতি, পরে এক চয়েস ভোট এবং প্রয়োজন হলে র‍্যাংক চয়েস ভোটিং পদ্ধতিতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। ভোটার থাকবেন সাতজন—উল্লিখিত পাঁচ সদস্যের সঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের একজন করে বিচারপতি।

তাহের বলেন, “দুই বিচারপতি অন্তর্ভুক্ত করার কারণ হলো—যাতে কোনো একক দল বা পক্ষ ‘ডিসাইডিং ফ্যাক্টর’ না হয়ে ওঠে। আশা করি বিচারপতিরা নিরপেক্ষ থাকবেন, এতে হর্স ট্রেডিংয়ের সম্ভাবনাও কমবে।”

তিনি জানান, বিএনপির আপত্তি হলো—যদি ঐকমত্য না হয়, তবে বিষয়টি সংসদে পাঠানো হোক। তবে জামায়াতসহ অধিকাংশ দল মনে করে, সংসদে পাঠালে সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হবে না। তাহেরের ভাষায়, “সংসদে হয়তো পাঁচ-ছয়টি দল আছে, কিন্তু এই সংলাপ বডিতে ৩০টির বেশি দলের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। এখানেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত।”

আজকের আলোচনায় অংশ নেয় জামায়াতে ইসলামী ছাড়াও বিএনপি, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), গণসংহতি আন্দোলনসহ প্রায় ৩০টি রাজনৈতিক দল। আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। সঞ্চালনায় ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। উপস্থিত ছিলেন সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান ও ড. আইয়ুব মিয়া।

Watermark