রাজশাহীর বাঘা উপজেলার মহদীপুর-হিলালপুর মাধ্যমিক বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে ছুটিতে থাকা প্রধান শিক্ষক ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও স্থানীয় বাসিন্দাসহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। সংঘর্ষে দেশীয় অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগও উঠেছে।
বুধবার (৩০ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে বিদ্যালয় চত্বরে এই ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল খালেকের বিরুদ্ধে কয়েক মাস আগে নিয়োগ-বাণিজ্যসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। এরপর তিনি দুই মাসের ছুটিতে যান। তাঁর অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আবদুল ওয়াদুদ।
বুধবার সকালে প্রধান শিক্ষক আবদুল খালেক তাঁর সমর্থকদের নিয়ে বিদ্যালয়ে প্রবেশের চেষ্টা করলে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও স্থানীয়রা মানববন্ধন করে প্রতিবাদ জানায়। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে।
ঘটনায় প্রধান শিক্ষক আবদুল খালেক (৫০), তাঁর সমর্থক আনোয়ার হোসেন (৪০), আমানউল্লাহ হক (৩৫), এনামুল হক (৪২) ও নেক আলম (৫৫) আহত হন।
অন্যদিকে, আহতদের মধ্যে রয়েছেন শিক্ষক জাকির হোসেন (৪৫), আয়া বানুয়া আরা বেগম (৪০), পিয়ন আবু জার (৩৫), শিক্ষার্থী সুমাইয়া খাতুন (১৬) এবং স্থানীয় বাসিন্দা রহিদুল ইসলাম, রাহাবুল ইসলাম, আকাশ আলী, বজলুর রহমান, জীবন আলী, মারুফ আলী, সাগর আলী, রাজু আহম্মেদ, রুবেল হোসেন ও সম্রাট আলী।
আহতদের মধ্যে তিনজন—আমানউল্লাহ, আবদুল খালেক ও আকাশ আলী—কে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিরা বাঘা ও চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
সংঘর্ষের সময় দুই পক্ষের হাতে লাঠিসোঁটা, চায়নিজ কুড়াল ও হাতুড়ি ছিল বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবদুল ওয়াদুদ বলেন, “বিদ্যালয়ে ক্লাস চলাকালে প্রধান শিক্ষক আবদুল খালেক বহিরাগতদের নিয়ে দেশীয় অস্ত্রসহ প্রবেশ করেন এবং হামলা চালান। এতে শিক্ষক, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীসহ কয়েকজন আহত হন।”
অন্যদিকে, প্রধান শিক্ষক আবদুল খালেকের ছেলে ফয়সাল আহমেদ অভিযোগ করেন, “আমার বাবাকে পূর্বে লাঞ্ছিত করে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। আত্মসম্মান রক্ষায় তিনি ছুটিতে যান। কিন্তু তাঁকে চাকরিচ্যুত করা হয়নি। তাই তিনি বিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে গেলে প্রতিপক্ষ ইচ্ছাকৃতভাবে হামলা চালায়।”
এ বিষয়ে বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আ ফ ম আছাদুজ্জামান বলেন, “সংঘর্ষে উভয় পক্ষের লোকজন আহত হয়েছেন। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাম্মী আক্তার জানান, এ ঘটনার পেছনে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, “এটি নতুন কোনো ঘটনা নয়। আগেও এই বিদ্যালয়ে বিশৃঙ্খলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রতিবেদন শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে।”