নরসিংদীতে অনুষ্ঠিত এক পথসভায় আগামী ৩ আগস্ট নতুন বাংলাদেশের ইশতেহার ঘোষণার ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি জানান, ওইদিন ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ইশতেহার প্রকাশ করা হবে। সেখানে সবাইকে যোগদানের আমন্ত্রণ জানিয়ে তিনি বলেন, “আপনারা যদি পাশে থাকেন, তাহলে আমরা সকল দাবি আদায় করেই ছাড়ব।”
এই ঘোষণা আসে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে এনসিপির আয়োজিত ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’র শেষ দিনের কর্মসূচি থেকে। মাসব্যাপী এই পদযাত্রা শুরু হয়েছিল ১ জুলাই রংপুরের পীরগঞ্জে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মধ্য দিয়ে।
পথসভায় নাহিদ ইসলাম বলেন, “গত এক বছরে দেশে নানা ষড়যন্ত্র হয়েছে। এখনো আমরা নতুন সংবিধান পাইনি, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রপতির অপসারণ হয়নি, আমাদের ঘোষণাপত্রও আসেনি। কিন্তু আমরা কোনো দাবিতে ছাড় দিইনি।” তিনি আরও বলেন, “চব্বিশের আন্দোলন ছিল মুক্তির লড়াই, যা গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নিয়েছিল। আমরা আজ বিপ্লবের শহর নরসিংদীতে এসেছি, সেই স্মৃতি আমরা ভুলিনি। আমরা এখনো স্মরণ করি ১৮ জুলাইয়ের শহীদ তাহমিদ ও ইমনকে, আর ভুলিনি কিভাবে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে আমাদের দমাতে চাওয়া হয়েছিল।”
তিনি জানান, নরসিংদীতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে মোট ২২ জন শহীদ হয়েছেন এবং তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, “আমরা নরসিংদীকে একটি শিল্পোন্নত জেলা হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। এখানে যেসব সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ রয়েছে, তাদের বিতাড়িত করতে হবে। আপনারা এনসিপির হাত শক্তিশালী করুন—ইনশা আল্লাহ, আমাদের বিজয় আসবেই।”
আন্তর্বর্তী সরকারের ছাত্র উপদেষ্টাদের ঘিরে চলা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “তাঁরা আমাদের দলীয় কেউ নন, তাঁরা গণ-অভ্যুত্থানের প্রতিনিধি। তাঁদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র মানে গণ-অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধেই ষড়যন্ত্র, যা আমাদের রুখে দিতে হবে।”
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, যিনি বলেন, “ঐকমত্য কমিশন থাকলেও পেছন থেকে এখনো পাঞ্জাবি টেনে ধরা হচ্ছে। আমাদের শহীদদের কথা শুনুন, তা না হলে কী হবে, তা ভবিষ্যত বলে দেবে।” তিনি নতুন সংবিধান তৈরির দাবিও পুনর্ব্যক্ত করেন।
এছাড়া, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন সরকারের ভূমিকা তদন্তের দাবি জানিয়ে বলেন, “চব্বিশের অভ্যুত্থানে সেনাবাহিনীর কিছু সদস্য গুলি চালিয়েছিল। আমরা জানতে চাই, কার নির্দেশে তারা সেটা করেছিল।” উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমের সঞ্চালনায় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন শিরিন আক্তার, আবদুল্লাহ আল ফয়সাল ও আওলাদ হোসেন প্রমুখ।
এর আগে বিকেলে জেলখানা মোড় থেকে শুরু হওয়া পদযাত্রায় অংশ নেয় অসংখ্য নেতা-কর্মী। পদযাত্রা শেষ হয় পৌরসভার সামনে সমাবেশস্থলে। সমাবেশের আগে শহীদ পরিবারের সঙ্গে মতবিনিময় করেন নাহিদ ইসলাম।
এই কর্মসূচিকে ঘিরে শহরে নেওয়া হয়েছিল কঠোর নিরাপত্তা। শহরের মোড়ে মোড়ে এবং সভাস্থলে মোতায়েন ছিল পুলিশের বিপুল উপস্থিতি। নিরাপত্তাবাহিনী সূত্রে জানা যায়, মাঠে ছিল ৯০০-র বেশি পুলিশ সদস্য।
উল্লেখ্য, গত ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের (বর্তমানে নিষিদ্ধ) নেতা-কর্মীদের হামলায় সংঘর্ষ হয়, যেখানে পাঁচজন নিহত হন এবং অর্ধশতাধিক আহত হন। ১৯ জুলাই চকরিয়ায় বিএনপি ও ছাত্রদলের হামলায় ভেঙে দেওয়া হয় এনসিপির পথসভার মঞ্চ।