Top Header
Author BartaLive.com
তারিখ: ৩১ জুলাই ২০২৫, ০৯:১৭ অপরাহ্ণ

আমরা কেনই বা নিষ্পাপ শিশুদের মরদেহ লুকাতে যাব? এ ধরনের অভিযোগ ভিত্তিহীন ও দুঃখজনক

News Image

গত ২১ জুলাই রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাশে একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় উদ্ধার অভিযানে অংশ নেওয়া সেনাসদস্যদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন সেনাবাহিনীর সদর দপ্তরের পরিচালক (মিলিটারি অপারেশনস) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজিম-উদ-দৌলা।

৩১ জুলাই এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, “কেউ কেউ অভিযোগ করছেন, আমরা শিক্ষকদের মারধর করেছি বা নিহত শিশুদের মৃতদেহ লুকানোর চেষ্টা করেছি। অথচ ঘটনাস্থলে শিশুদের অভিভাবকেরা উপস্থিত ছিলেন। আমরা কেনই বা নিষ্পাপ শিশুদের মরদেহ লুকাতে যাব? এ ধরনের অভিযোগ ভিত্তিহীন ও দুঃখজনক।”

তিনি স্বীকার করেন, উদ্ধার কার্যক্রম চলাকালে বিশৃঙ্খলার মধ্যে কাউকে ধাক্কা লাগতে পারে, তবে তা ইচ্ছাকৃত ছিল না। “আমরা অ্যাম্বুলেন্সের চলাচলের জন্য রাস্তা নিয়ন্ত্রণ করছিলাম, এতে কিছু ধাক্কাধাক্কি হতে পারে। তবে আমাদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল জীবন বাঁচানো,” বলেন তিনি।

বিমানটির সামনে আঘাতের স্থানে জ্বালানির উপস্থিতি ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, “সেখানে যেকোনো সময় বিস্ফোরণ ঘটতে পারত। উদ্ধার অভিযানে অংশগ্রহণকারী সেনাসদস্যরা সেই ঝুঁকির কথা জানতেন, কিন্তু তারা তবুও দায়িত্ব পালনে পিছু হটেননি।”

তিনি জানান, দুর্ঘটনাস্থল স্কুল ভবন থেকে সেনা ক্যাম্পের দূরত্ব মাত্র ১৫০ থেকে ২০০ গজ হওয়ায় প্রথমে তারাই সাড়া দেন এবং দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কাজ শুরু করেন। “সেনাসদস্যরা দৌড়ে গেছেন, আহত শিশুদের বের করে আনেন, তাদের ঢেকে রাখেন, যতটা সম্ভব সেবা দেওয়ার চেষ্টা করেন। ফুটেজে এসব দৃশ্য স্পষ্ট।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা সেনাবাহিনী কৃতিত্ব পাওয়ার জন্য কিছু করি না। আমরা আমাদের কর্তব্য পালন করি। আমাদের কাজ দিয়েই আমাদের বিচার করুন।”

উদ্ধার অভিযানের সময় সেনাবাহিনীর ২৯ জন সদস্য আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে তিনজন এখনও সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে ব্রিগেডিয়ার নাজিম বলেন, “ঘটনার খবর শুনে স্থানীয় আর্টিলারি ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রফিক নিঃশ্বাস ফেলতে না পেরে ছুটে যান। তাকে আমি হাঁপাতে এবং চিৎকার করতে দেখেছি। তিনি আদেশের অপেক্ষা করেননি, দায়িত্ব বুঝে নিয়েই নেমে পড়েন।”

তিনি তীব্র নিন্দা জানান সেসব মানুষের, যারা আহত শিশুদের সাহায্য না করে ভিডিও ধারণ করছিলেন। “একটি শিশু যখন মাটিতে পড়ে মারা যাচ্ছিল, তখন সাহায্যের বদলে মোবাইলে ভিডিও করা হচ্ছিল। এক বোতল পানি ৬০০ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। কোথায় গেল আমাদের মানবতা?” উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশে প্রশ্ন রাখেন তিনি।

তবে তিনি শিক্ষার্থীদের সাহসিকতা ও মানবিকতার প্রশংসা করে বলেন, “বিএনসিসি, স্কাউট ও স্বেচ্ছাসেবীরা যেভাবে উদ্ধারকাজে ফায়ার সার্ভিসকে সহায়তা করেছে, তা প্রশংসনীয়।”

সেনাবাহিনী দুর্ঘটনাস্থলে কঠোর ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছিল। এমনকি সেনাপ্রধানের গাড়ি ছাড়া অন্য কর্মকর্তাদের হেঁটে প্রবেশ করতে বলা হয়। ব্রিগেডিয়ার নাজিম বলেন, “আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও বলেছি, ‘স্যার, আপনাকে হেঁটে যেতে হবে।’ এবং তারা তা করেছেন। কারণ, আমাদের অগ্রাধিকার ছিল উদ্ধারকাজ, প্রটোকল নয়।”

মৃত বিমানচালকের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি যতদূর বুঝি, তিনি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বিমানটি মূল ভবন থেকে দূরে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। যদি তিনি আগেই বের হয়ে আসতেন, হয়তো বেঁচে যেতেন। কিন্তু তিনি নিজের জীবন দিয়ে অনেকগুলো প্রাণ বাঁচালেন। এটাই প্রকৃত আত্মত্যাগ।”

সাংবাদিকদের উদ্দেশে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজিম বলেন, “দয়া করে শুধু গুজব বা বিতর্ক নিয়ে নয়, বড় চিত্রটি দেখুন। আমাদের আত্মত্যাগকে সম্মান করুন। ইউনিফর্ম খুলে শিশুর আড়াল করতে গিয়ে কেউ যদি ধরা পড়ে, জেনে রাখুন, সেটা ছিল সুরক্ষার জন্য, শোডাউন করার জন্য নয়।”

Watermark