ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক নীতি কার্যকর হওয়ার পর বিশ্ববাণিজ্যে বড় ধরণের আলোড়ন দেখা দিয়েছে। ১ আগস্ট থেকে ভারতীয় পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক কার্যকর করেছে যুক্তরাষ্ট্র। একইসঙ্গে কানাডার কিছু পণ্যের উপর ৩৫ শতাংশ, ব্রাজিলের উপর ৫০ শতাংশ, সুইজারল্যান্ডের উপর ৩৯ শতাংশ, তাইওয়ানের উপর ২০ শতাংশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের উপর ১৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। জাপানের উপর ১০ শতাংশ, দক্ষিণ কোরিয়ার উপর ৫ শতাংশ এবং অন্যান্য আরও ৬৯টি দেশের উপরও নতুন করে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, যা ৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে।
তবে এই শুল্ক আরোপের তালিকায় ভারতের অবস্থান অত্যন্ত স্পর্শকাতর। যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছে, ভারত দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন পণ্যের উপর অতিমাত্রায় শুল্ক আরোপ করে আসছে, তাই পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ভারতের রপ্তানি পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ একক শুল্ক হার কার্যকর করা হয়েছে। এর ফলে বিশ্ববাজারে ভারতের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ট্রাম্প-মোদি সম্পর্ক নতুন করে আলোচনায় এসেছে। ভারতের মিডিয়ায় অতীতে ব্যাপক প্রচার হয়েছিল যে, ট্রাম্প ভারতের ‘বন্ধু’ মোদিকে আন্তর্জাতিকভাবে সমর্থন দেবেন, এমনকি বাংলাদেশের ‘ইউনূস সরকার’কে হটিয়ে মোদির পছন্দ শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় বসানো হবে বলে গুজবও ছড়ানো হয়। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত হাজার হাজার অবৈধ ভারতীয় নাগরিককে আটক করে জোরপূর্বক ভারতে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তারও পরপরই ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে ‘মোদির গদি’তে চাপ সৃষ্টি করেছে। এর ফলে ভারতের জনগণ মোদির কূটনৈতিক ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে।
অন্যদিকে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশের উপর ৩৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা থাকলেও তা কমিয়ে ২০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি বাংলাদেশের বর্তমান ‘ইউনূস সরকারের’ কূটনৈতিক সাফল্য ও আন্তর্জাতিক স্তরে গ্রহণযোগ্যতারই প্রতিফলন।
চীনের বেলায় যদিও একসময় ট্রাম্প ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছিলেন, বর্তমানে তাদের সঙ্গে একটি চুক্তি সম্পাদনের দিকেই এগোচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট জানিয়েছেন, চুক্তি প্রায় চূড়ান্ত হলেও এখনও সম্পূর্ণ হয়নি।
হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, অনেক দেশ বাণিজ্য আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের ন্যায্য প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় এই শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। ট্রাম্পের ভাষায়, এই পদক্ষেপ ‘ন্যায়সঙ্গত ও পারস্পরিক’ বাণিজ্য সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করতেই নেওয়া হয়েছে।
এদিকে শুল্ক আরোপের ঘোষণার পর বিশ্ববাজারে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আশঙ্কা তৈরি হয় যে বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে এবং চীনের সঙ্গে আলোচনা ব্যর্থ হতে পারে। ফলে বড় ধরনের মন্দাভাব দেখা দেয় বিশ্ব শেয়ারবাজারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দক্ষিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের এই বাণিজ্যিক অবস্থান কেবল অর্থনৈতিক নয়, বরং রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক বার্তাও বহন করছে। যেখানে একদিকে ভারত কূটনৈতিকভাবে চাপে পড়েছে, অন্যদিকে বাংলাদেশ একটি তুলনামূলক ইতিবাচক অবস্থানে উঠে এসেছে।